ইসরায়েল শনিবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী ও এর আশেপাশে হামলা চালিয়েছে। ইরানের প্রতিরোধের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের প্রতিশোধমূলক হামলা শেষ করারও ঘোষণা দেয় তারা।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েল যুদ্ধ চাইলেও ইরানের সঙ্গে বড় কোনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়। এ জন্যই মূলত আজ ইরানে তাদের হামলার ব্যাপ্তি ছিল খুবই ছোট।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফুয়াদ ইজাদি আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসরায়েলিরা ইরানের বিরুদ্ধে একটি বড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সেটা এখন না।’
ইসরায়েল এখনও ইরানের সঙ্গে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না বলে মনে করেন তিনি।
ইজাদি বলেন, ‘লেবাননের সময় কী হয়েছিল মনে আছে। এক বছরের প্রস্তুতির পর ইসরায়েলিরা লেবাননে হামলা চালায়। প্রথমে তারা গাজায় গণহত্যা শুরু করে। সেইসঙ্গে লেবাননে কিছু হামলা চালায় এবং গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যায়। গাজায় গণহত্যা শুরুর ১১ মাস পর তারা লেবাননে হামলা করে।’
আজ ইরানে হামলা চালিয়েও ইসরায়েল স্বল্প সময়ের মধ্যে চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তারা হামলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ তাদের হামলার পরিকল্পনা করার জন্য সময় দরকার ছিল। ইরানের বিশ্লেষণ হলো, ইসরায়েলিরা এই সময়ে ইরানের সঙ্গে বড় সামরিক সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত না।’
‘তারা এক বছর বা দুই বছর পরে বড় আকারে হামলা করতে পারে। আমি মনে করি ইসরায়েলিরা চিরস্থায়ী ও ক্রমাগত যুদ্ধে থাকতে চায়,’ যোগ করেন ইজাদি।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা প্রত্যাশিত হলেও সামনে আরও বেশি কিছু দেখা যাবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটাকে এখনই হামলা বলা যাবে না। সামনে হয়তো আরও অনেক কিছু দেখতে যাচ্ছি।’
‘স্পষ্টতই নেতানিয়াহু শুধুমাত্র ইমেজের জন্য এটা করেননি, তার আরও কোনো স্বার্থ রয়েছে। এটি আসলেই তার জন্য সুযোগ। কারণ, আমেরিকান প্রশাসন আক্ষরিকভাবেই এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘গত এক বছরে তাদের কোনো শক্তিই দেখায়নি এবং নেতানিয়াহু যা করতে চেয়েছেন, ঠিক সেটাই করেছেন,’ তিনি যোগ করেন।
ইসরায়েল প্রতিনিয়ত গাজা, লেবাননসহ বিভিন্ন জায়গায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দেশের নাগরিকদের বলা হচ্ছে, ইসরায়েলে যেকোনো হামলা হলে তা প্রতিহত করার জন্য তারা প্রস্তুত, এমনকি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন যেকোনো বিষয় মোকাবিলা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে সামরিক আগ্রাসন ইসরায়েল ও সেখানে বসবাসকারীদের নিরাপদ রাখবে বলেও সরকারের তরফে দাবি করা হয়।
তবে, দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশ এ নিয়ে চিন্তিত যে, এমন অব্যাহত সামরিক আগ্রাসন ইসরায়েলকে আরও বেশি দুর্বল করে দিচ্ছে।
ইসরায়েল সরকার দাবি করছে, এই মুহূর্তে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোদমে সক্ষম। ইরানের ওপর এই হামলার কারণে তাদের সতর্কতা বাড়াতে হবে না।
ইসরায়েল ও ইরানের পরোক্ষ সংঘাত দীর্ঘদিনের হলেও প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদে বড় সংকট তৈরি করতে পারে। বর্তমানে এই অঞ্চলে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও।
কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফ্ট থিংক ট্যাঙ্কের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পার্সি বলছেন, ইরানের ওপর ইসরায়েলের এই হামলা উদ্বেগজনক এবং এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সবচেয়ে খারাপ পরিণতি আসতে এখনো বাকি রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন একটু সতর্ক হতে হবে। কারণ, আমরা এর দুটি পর্যায় দেখেছি, আরও কয়েকটি পর্যায়ে (হামলা) এটি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত এসব হামলা প্রথমগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হতে পারে। কারণ, প্রথম হামলাগুলোতে হয়তো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হয়েছে, যাতে তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী হামলা চালানো যায়।’
পার্সির দাবি, ‘এখন পর্যন্ত (ইরানের পক্ষ থেকে) বলা হচ্ছে যে, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, স্বল্প ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটা মূলত ইসরায়েলি হামলায় ক্ষয়ক্ষতি কম দেখানোর একটি প্রচেষ্টা, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইরানিরা আর উত্তেজনা চায় না।’