কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসান করার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে এবার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে ফের আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের চার কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে যৌথ বাহিনী।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলায় ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয় তারা।
বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালনকালে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের চার কর্মকর্তাকে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি মূলজান পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় পুরো জেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে সদর উপজেলার মূলজান পল্লী বিদ্যুৎ অফিস প্রাঙ্গনে ব্ল্যাক আউট কর্মসূচির নেতৃত্বদানকারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম প্রশাসন রাজিবুল হাসান, এজিএম ইএমসি মো. হাসিব উদ্দিন, এজিএম গিয়াজ উদ্দিন খান শাকিল, ডিজিএম হরিরামপুর সামিউল কবিরসহ চার কর্মকর্তার নেতৃত্বে অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবস্থান নেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বার বার অনুরোধ করা হলেও বিদ্যুৎ লাইন চালু না করায় দুপুর দেড়টার দিকে যৌথ বাহিনী এবং সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেওয়া চার কর্মকর্তাকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়ে আসে। এরপর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকার পর দুপুর আড়াইটার দিকে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ লাইন চালু করে দেয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।
বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন মেজর মিনহাজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেস আলী ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এম আমান উল্লাহসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সুলতান নাছিমুল হকের সরকারী নম্বরে একাধিকবার ফোন করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
বরিশালে বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারকে চাকরি থেকে অবসান দেওয়ার প্রতিবাদে বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল থেকে বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ রাখা হয়। পরে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বরিশাল পল্লী বিদ্যুত অফিসের সামনে এসে প্রতিবাদ জানায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈঠক করে। পরে কিছু লাইন সচল হলেও বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেশ কিছুদিন ধরে তাদের বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে। কিস্তু এমন আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ এর কারো সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
ফের আন্দোলনে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
গত দুইদিনে মাঠ পর্যায়ের ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে চাকরি থেকে অবসান করার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে এবার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে ফের আন্দোলনে নেমেছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল সাড়ে দশটায় জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর এলাকায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অফিসে কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয় তারা। এদিকে কুমিল্লার চারটি সমিতিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
আন্দোলনকারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করাসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এরই মধ্যে বুধবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ জন এবং বৃহস্পতিবার আরও ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অবসান করা হয়। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলনে নামেন তারা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তারা।
এদিকে, বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর রামপুর এলাকায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার। পরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে সম্মেলন কক্ষে বৈঠকেও অংশ নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কুমিল্লা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরিজ, সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানমসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দাবি, জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্দেশনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় বিধি অনুযায়ী চিঠির মাধ্যমে তাঁদের চাকরি অবসান করা হয়েছে। আন্দোলনটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।