সদ্য বিদায়ী সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর তা হু হু করে বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাসে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বেশি। এ রেমিট্যান্স গত বছরের আগস্ট মাসের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। গড়ে প্রতিদিন দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ১৭ লাখ ডলার। রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার। একক মাস হিসাবে আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬২ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৯ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার।
এছাড়া প্রবাসী আয় আগের মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার বেশি এসেছে। গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার; যা আগের ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
আগস্টে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল মাস থেকে টানা তিন মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এলেও জুলাই মাসে তা কমে যায় এবং দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এখন প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ বৈধপথে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। তার আগের মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস বা মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি ডলার (২৫.৬৫ বিলিয়ন)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২.৬০ কোটি ডলার (২০.৬০ বিলিয়ন)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে গত বুধবার জানিয়েছেন, দেশের রিজার্ভ এখন কমবে না।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।