ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনকে হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই মো. রাজিব।
আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। বাদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ফয়জুল ইসলাম রাজনকে পুলিশ বুকে গুলি করে হত্যা করে। তার চিকিৎসা গ্রহণে বাধা দেয়। সেই সময় আশপাশের অসংখ্য ছাত্র আহত হয় এবং অনেকেই সেদিন মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুবরণকারী ছাত্রদের তারা হাসপাতালে নিতে দেয়নি, তাদের পোস্টমর্টেম পর্যন্ত করতে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, এতদিন যাবত আন্দোলন চলাকালে মামলা করার সুযোগ ছিল না। এজন্য নিহতের ভাই রাজিব বাদি হয়ে আজকে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে শুনানি শেষে মিরপুরের কাফরুল থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন মামলাটিকে নিয়মিত এফআইয়ার হিসেবে গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার, তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারের জন্য সোপর্দ করা সবকিছু এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এ মামলা দায়েরের মাধ্যমে একটি নিয়মিত মামলায় আসামি হিসেবে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপিসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা এখন আসামি হিসেবে গণ্য হবেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে তদন্ত, গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা যাবে।
এর আগে বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে আইনজীবী সোহেল রানা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুম করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক র্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ এবং র্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে আসামি করা হয়।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে এই মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
তারও আগে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি।
ওই হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করে। ওইসব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।
অভিযোগে মামলার বাদী বলেন, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়িতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এ জন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এই মামলা করেছেন।
মামলার অভিযোগে বাদী আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার জন্য বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে পুলিশের আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীনস্থ পুলিশদের নির্দেশ দিয়ে মিছিলে গুলি চালায়। পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কাজেই এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ নিয়ে তিনটি মামলা হলো।