রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গণতান্ত্রিক নির্বাচন আর শিক্ষার্থীদের দেশ সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এই দুই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে এই অন্তর্বর্তী সরকার। এতে যতদিন লাগে এই সরকার ততদিনই থাকবে, এর বেশিও না কম না। শনিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোন কথা হয়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রত্যাশা থাকবে যতদ্রুত নির্বাচন দেয়া যায়, আবার ছাত্র জনতার প্রত্যাশা দেশের সংস্কার। এ দুইয়ের সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার জন্য যত দিন থাকা দরকার হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তত দিন দায়িত্ব পালন করবে। আমি যতদ্রুত সম্ভব আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ফিরতে চাই। ছাত্র জনতা দেশ পরিচালনার জন্য অপূর্ব সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন সেটি যথাযথ পালন করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ফিরবো আসা করছি।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি শ্রদ্ধেয় মানুষ। ছাত্র-জনতার দাবির প্রেক্ষিতে তার কি করা উচিত সেটা উনার বিবেচনার উপর ছেড়ে দিলাম।
তিনি আরও বলেন, এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্রতিনিধিত্ব করছেন সমন্বয়করা। এত বড় একটা গণ আন্দোলন, যেখানে ১৬-১৭ বছর ধরে থাকা একটা সরকার, যে সরকারের প্রধানকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ফলে ওই রকম (শিক্ষার্থীদের) জায়গা থেকে চাপ আসার পর প্রধান বিচারপতির কী করা উচিত তা ওনার ওপর ছেড়ে দিলাম।
এখনও সুপ্রিম কোর্টে যে প্রধান বিচারপতি রয়েছেন তিনি একটি ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছিলেন। এ বিষয়ে ছাত্র-জনতার একটি স্ট্যাটাস দেখেছি আমি। সেখানে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতি কোনও আলোচনা না করেই ফুল কোর্ট মিটিং আহ্বান করেছেন। মনে করা হচ্ছে, স্বৈরাচারী সরকারের পরাজিত যে শক্তি তাদের পক্ষের একটি মুখ। আমাদের প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। কিন্তু তার কিছু ব্যাপারে তো অবশ্যই প্রশ্ন ছিল। বিশেষ করে যখন এই আন্দোলনটি হচ্ছিল তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন যে, আন্দোলন করে কি রায় পরিবর্তন করা যায় কি না? এটা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় ছিল খুব দুঃখজনক। তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর ছাত্রলীগের কাছ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা নিয়েছিলেন তিনি। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। এটা খুব ভালো একটা ইম্প্রেশন দেয় না। ডিবির প্রধান হারুনকে নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রধান বিচারপতি তার কাছ থেকেও স্বর্ণের তরবারি উপহার নিয়েছিলেন। হারুন এই আন্দোলনে আমাদের ছাত্রদেরকে আটকে রেখে নির্যাতনের মূল ব্যক্তি ছিলেন। প্রধান বিচারপতি যখন ডিবি প্রধানের কাছ থেকে সোনার তরবারি উপহার নিয়েছিলেন আমার তখন খুব অবাক লেগেছিলো। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিদেশে গেলে তার (প্রধান বিচারপতির) বাসায় থাকেন। এসব বিষয়ে তো তাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। আন্দোলন চলাকালে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, এতো কীসের আন্দোলন। ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। আজকে বোধহয় সেটা আবারও বলা হয়েছে, যেহেতু তিনি ফুলকোর্টের মিটিং ডেকেছেন।
এর আগে শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে সচিবালয়ে যান অন্তর্বর্তী সরকারের এই আইন উপদেষ্টা। সচিবালয়ের প্রথম দিন অফিসে তাকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান। এরপরেই সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের ৮ তলায় তার কক্ষে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।