1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টার : স্টাফ রিপোর্টার
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ভোলায় কোস্টগার্ডের সফল অভিযান ‘গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ বরিশাল থেকে ধরে আনা কর্মকর্তাকে ঢাকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ হাজী সেলিমের ছেলে সাবেক এমপি সোলাইমান গ্রেপ্তার আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন: ড. ইউনূস আইন করে কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি দেয়া অবৈধ ছিল : হাইকোর্টের রায় শেয়ারবাজারে কারসাজিতে সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা হয়েছে ৫০ লাখ বিদ্যুৎ নিয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে ভারত: মির্জা ফখরুল নাহিদ-আসিফরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই নেমেছিল: সারজিস

বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীর অস্বীকৃতি হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের নেতা শেখ হাসিনা হঠাৎ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তাঁর জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত নেন কারফিউ বলবৎ রাখতে সেনারা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালাবেন না। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানেন—এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরদিন সকালে শেখ হাসিনার সরকারি আবাস গণভবনে যান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, তিনি দেশজুড়ে যে কারফিউ ডেকেছেন, তা বাস্তবায়নে তাঁর সেনারা অপারগ। বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে, এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, বার্তাটি পরিষ্কার ছিল, শেখ হাসিনার প্রতি আর সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না।

ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার অনলাইন বৈঠকের বিশদ বিবরণ এবং শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া বার্তা আগে প্রকাশিত হয়নি। ওই বৈঠক আর বার্তায় ফুটে উঠেছিল, তিনি সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন।

এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে তিনি ভিন্নমত খুব কমই সহ্য করেছেন। গত সোমবার তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর এমন বিশৃঙ্খল শাসনকাল আকস্মিকভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল।

গত রোববার দেশব্যাপী সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হওয়ার পরে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন ছিল এটি।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রোববার সন্ধ্যার আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি একে যেকোনো বিশৃঙ্খলার পর হালনাগাদ তথ্য নিতে নিয়মিত বৈঠক হিসেবে বর্ণনা করেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আরও প্রশ্ন করলে তিনি বিস্তারিত জানাননি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের মন্তব্য পাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এক দিন আগে। আমরা কয়েকজন শুধু জানতাম, তিনি ঘোষণা দেবেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, সেটাই ছিল তাঁর পরিকল্পনা। তবে যখন তারা ওই গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করল, তখন আমরা ভয়ে বললাম, আর সময় নেই। তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৪৮ ঘণ্টার পরিস্থিতি বোঝার জন্য গত সপ্তাহের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত চারজন সেনা কর্মকর্তা এবং এসব ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন এমন দুটি সূত্রসহ ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে তাঁদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ শাসন করেছেন। হাজারো বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর গত জানুয়ারিতে তিনি চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা বর্জন করেছিল।

উচ্চ বেকারত্বের মধ্যে প্রবলভাবে লোভনীয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের জন্য আদালতের রুলের জেরে বিক্ষোভের সূত্রপাত হওয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার ওপর তাঁর কঠোর নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভ দ্রুত হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে রূপ নেয়।

শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেননি ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু বাংলাদেশের তিন সাবেক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভের মাত্রা এবং কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হওয়ার কারণে যেকোনো মূল্যে হাসিনাকে সমর্থন করা যায় না।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। সেটিই সম্ভবত সেনাবাহিনীর প্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, সেনারা বাইরে আছেন। কী ঘটছে, তা তাঁরা দেখছেন।

ওয়াকার-উজ-জামান বৈবাহিক সূত্রে হাসিনার আত্মীয়। তিনি গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর সমর্থন নড়বড়ে হওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছিলেন। সেদিন তিনি একটি অলংকৃত কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন। সেদিন সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভায় শতাধিক উর্দিধারী সেনা কর্মকর্তার সামনে বক্তৃতা করেছিলেন। সেনাবাহিনী পরে এই আলোচনার কিছু বিবরণ প্রকাশ্যে আনে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন, জীবন রক্ষা করতে হবে। তিনি কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।

এটাই ছিল প্রথম ইঙ্গিত যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সহিংস বিক্ষোভ দমন করবে না, যা হাসিনাকে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা গত সোমবার কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানও ছিলেন।

শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের বাধা দেয়নি। তিনি যা অঙ্গীকার করেছিলেন, সেনাবাহিনী তা করেছে।’

‘স্বল্প সময়ের নোটিশ’

অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী কারফিউর প্রথম দিন গত সোমবার হাসিনা গণভবনের ভেতরে ছিলেন। রাজধানী ঢাকার একটি খুবই সুরক্ষিত কমপ্লেক্স এটি, যা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাইরে বিস্তীর্ণ শহরের রাজপথে লোকজন জড়ো হয়েছিল। হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলনের নেতাদের গণযাত্রার ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষ শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন।

ভারতীয় কর্মকর্তা ও বিষয়টির সম্পর্কে অবগত দুই বাংলাদেশির তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতি হাসিনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রী সোমবার সকালে দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশের একটি সূত্র জানায়, লন্ডনে বসবাস করা শেখ হাসিনার বোন (শেখ রেহানা) সে সময় ঢাকায় ছিলেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। একসঙ্গে উড্ডয়ন করে দেশ ছাড়েন। স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে তাঁরা ভারতের উদ্দেশে রওনা হন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সংসদে বলেছেন, যোগাযোগ থাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিকে জুলাই মাসজুড়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল নয়াদিল্লি।

এস জয়শঙ্কর বলেন, কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে সোমবার ঢাকায় জনতা জড়ো হওয়ায় হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে তিনি তখনকার মতো ভারতে আসার জন্য অনুমোদন চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

ভারতের আরেক কর্মকর্তা বলেন, হাসিনাকে ‘কূটনৈতিকভাবে’ জানানো হয়েছিল, ঢাকার পরবর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে—এ কারণে তাঁর অবস্থান সাময়িক হতে হবে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চান বিক্ষোভকারী ছাত্ররা। তিনি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেছেন, ভারতের ‘ভুল লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল…দয়া করে আপনার পররাষ্ট্রনীতি পুনর্বিবেচনা করুন।’

এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ইউনূসকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

সোমবার বিকেলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন উড়োজাহাজ দিল্লির বাইরে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে।

ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার তথ্যমতে, সেখানে ভারতের ক্ষমতাধর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে হাসিনার সাক্ষাৎ হয়েছিল।

নয়াদিল্লি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করার জন্য লড়াই করেছিল। ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনার বাবাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর হাসিনা কয়েক বছর ধরে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং তিনি প্রতিবেশী দেশটির রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন।

বাংলাদেশে ফিরে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন। ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি তাঁকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হিসেবে দেখা হতো। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিও (ভারত) তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ হিন্দুর জন্য অনুকূল বলে মনে করেছিল।

বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় দেশটির অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের মধ্যে এখনো অসন্তোষ রয়ে গেছে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, তাঁকে নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া উচিত ছিল না। এটা একটা বোকামি ছিল।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩