সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার পর সরকার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবকিছু করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন করা হবে কি না– সেই প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, সবকিছুই সম্ভব যদি এখানে আদালতের বিষয় না থাকতো। আদালতের বিষয় আদালতে সমাধান হোক। এই সমাধানের পর যদি আরও কিছু আলোচনা করতে হয় সেটি আলোচনা করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। দেশের কল্যাণে আমাদের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমাদের সন্তানদের কল্যাণ যা করা লাগে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি।
তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন আছে। যারা দেশের ভালো চায় না, তারা ইন্ধন দিচ্ছে। কোটার বিষয়টি সহজ। এটি নিয়ে আন্দোলন করার কিছু নেই। শিক্ষার্থীদের কিছু বলার থাকলে আদালতে উপস্থাপন করতে পারে। সরকার চায় কোটার বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান হোক।
কত শতাংশ কোটা থাকা উচিত বলে মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলবে আদালত। তবে আমি একটি বাস্তবতা বলতে পারি। সেটা হচ্ছে, ৪০তম বিসিএসে ৫৯টি জেলা থেকে পুলিশ ক্যাডারে কোনও নারী প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। আর ১৭টি জেলা থেকে নারী-পুরুষ কেউই নির্বাচিত হয়নি।
৪০, ৪১, ৪৩ তম বিসিএসে নারীদের অংশগ্রহণ কমেছে। ৩৮ তম বিসিএসে গড়ে ২৬ শতাংশের ওপরে নারীরা চাকরিতে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু পরের বিসিএসগুলোয় তো দেখা গেছে যে গড়ে ১৯ শতাংশ নারীরা এসেছে।
মন্ত্রী বলেন, আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলবো এ নিয়ে রাস্তায় না থেকে আদালতে নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ শিক্ষার্থীরা নেবে। কোটার বিষয়টি সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হোক সেটা সরকার চায়। শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে তাদের দাবির প্রতি সহমত পোষণ করে ২০১৮ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এই বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। তার পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর একটি পরিপত্র জারি হয়।
তিনি বলেন, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কোটা আছে। এটা থাকতে হয়। বাংলাদেশের সংবিধানেও সমতার ভিত্তিতে দেশে গিয়ে নেওয়ার কথা বলা আছে। সমতার ভিত্তিতে দেশে এগিয়ে নিতে হলে কোটার প্রয়োজন আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কোটার সংস্কার দরকার। নারীদের, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের, পোষ্যদের, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য কোটা থাকার উচিত। তবে এটি আলোচনার বিষয় কি পরিমাণ কোটা থাকতে হবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আন্দোলনের কারণে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের অফিসে যাওয়া, স্কুল কলেজে যাওয়া সমস্যা হচ্ছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা অযৌক্তিক।
পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস
পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এই ধরনের ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পিএসসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে সেই কথা পিএসসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এছাড়া চাকরি বিধি আছে। আইন আছে। কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সবার আগে অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় একজন ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে একটি দলের স্লোগান দিচ্ছে। যে দলটি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র করে আসছে। এই ড্রাইভারের বক্তব্য ওই দলের ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে। সে কোনও এজেন্ডা নিয়ে এসব কথাবার্তা বলছে কিনা সেটা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার কোনও ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না। বেশ কিছু দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামীতে প্রক্রিয়া জোরদার থাকবে।