জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা রহিমা বেগমকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন মরিয়ম মান্নান। সাজানো হয়েছিল অপহরণ নাটক। পাঁচ প্রতিবেশীকে আসামি করে দেয়া হয়েছিল মামলা। জেলও খাটতে হয়েছে তাদের। এবার পুৃলিশ খুঁজছে সেই রহিমা ও মরিয়মসহ চারজনকে ধরতে!
অপহরণ নাটকের বিষয়টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে আসার পরই রহিমা ও তার তিন মেয়ের নামে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক প্রতিবেশী। মামলাটি আমলে নিয়ে চারজনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন রাত ২টার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মাকে অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ আল সাদী। আর পর দিন একই অভিযোগ তুলে ওই থানায় মামলা করেন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী আক্তার।
মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল ও হেলাল শরিফের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই সময় তাদের গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।
ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই বেরিয়ে আসতে থাকে সাজানো নাটকের বিষয়টি।
২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী আদুরী আক্তার আদালতে নারাজি আবেদন করেন। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন বিচারক।
খুলনা সিআইডির পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম মামলাটি তদন্ত শেষে অপহরণের ঘটনাটি মিথ্যা উল্লেখ করে চলতি বছরের ১৩ মে আদালতে সম্পূরক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।
এরপর ভুক্তভোগী পাঁচজনই অব্যাহতি পান অপহরণ মামলা থেকে। এদের মধ্যে একজন মো. রফিকুল আলম পলাশ মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে ২৬ জুন খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ মামলার আবেদন করেন। এতে রহিমা বেগম, তার মেয়ে আদুরী আক্তার (২২), অপহরণ নাটকের মাস্টারমাইন্ড রহিমা বেগমের আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নান (২৮) এবং বড় মেয়ে কানিজ ফাতেমাকে (৩২) আসামি করা হয়। আদালত ওইদিনই মামলাটি আমলে নিয়ে চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
ভুক্তভোগী পলাশ বলেন, ‘আমার সঙ্গে রহিমা বেগম কিংবা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জমিজমা নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না। বিভিন্ন সময় রহিমা বেগম এবং তার মেয়েদের বিভিন্ন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছি। এ কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা আমাকে অপহরণ মামলায় আসামি করে। অপহরণের সাজানো নাটকের আসামি করায় দেড় বছর হয়রানি শিকার হয়েছি; জেলও খেটেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরা নয়, পুরো দেশবাসী এবং পুলিশ প্রশাসনকে তারা হয়রানি করেছে। প্রতারণা এবং মিথ্যাচার করার জন্য এদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। এদের শাস্তি দেখে যাতে আর কেউ এভাবে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ না করতে পারে।’
গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে আদালত থেকে এখনও গ্রেফতারি পরোয়ানার কাগজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। নথি পাওয়া মাত্রই আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’