রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে গেলো কয়েক দিনের তুলনায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমেছে। আগামীকালও ঢাকায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম থাকবে। তবে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে রাজশাহী বিভাগেও বৃষ্টি তুলনামূলক কম থাকবে। বললেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত গেলো ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পূর্বাভাস বলা হয়, অস্থায়ীভাবে দমকা বাতাস বা ঝড়ো হওয়া থাকতে পারে। কোথাও কোথাও গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হতে পারে এবং বজ্রপাতও হতে পারে। রয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হলেও রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হচ্ছিল। এখন একটু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ ও আগামীকাল চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেশি থাকবে। আগামী ৫ ও ৬ জুলাই রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বেশি ঝরবে বৃষ্টি। ৬ জুলাইয়ের পরে কেবল রংপুর বিভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেশি থাকবে।’
প্রসঙ্গত, জুলাই মাসে গড়ে ৫২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। আবহাওয়া অধিদপ্তর দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছে, এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও উল্লেখ করা হয়, জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, আগামী অন্তত এক সপ্তাহের মধ্যে লঘুচাপ সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মোট ৭৬টি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। গভীর নিম্নচাপগুলো বাদ দিলে জুন মাসে হয়েছে পাঁচটি, জুলাই মাসে ১৯টি, আগস্ট মাসে ২১টি ও সেপ্টেম্বরে ২৫টি। জুনের পরেই নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে জুলাই মাসে এবং সবচেয়ে বেশি থাকে সেপ্টেম্বরে।’
এদিকে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বায়ুচাপের তারতম্য। যে কারণে যে কারণে আজও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে আজও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে বজ্রসহ বৃষ্টি। দুর্ঘটনা এড়াতে এসব এলাকায় নৌ বন্দরে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গেলো কয়েক দিন থেকে প্রায় সারাদেশে বৃষ্টি হলেও কমছে না গরম। গতকাল ভোলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বর্ষার বৃষ্টিকে উষ্ণ বৃষ্টি বলা হয়। মেঘ বৃষ্টি আকারে ভূ-পৃষ্ঠে এলেও তাপমাত্রা খুব একটা কমাতে পারে না। টানা বৃষ্টি হলে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমে। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন বৃষ্টিপাত হচ্ছে কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি আছে এবং এই জলীয় বাষ্প সুপ্ত তাপ ছেড়ে দেয়, সেই কারণে গরমের অনুভূতির তীব্রতাও থাকছে। বর্তমানে বাতাসে জলীয় বাষ্প ৮০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে।’
এদিন সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন দেশের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলেও ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনুভূত হতে পারে। আগামী ৬ জুলাইয়ের পরে গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।’