সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এমন বাস্তবতায় নতুন নিয়োগে প্রত্যয় স্কিম, পুরাতন শিক্ষকদের আগের স্কিম বহাল রাখা ও আজীবন পেনশনসহ বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২ জুলাই) জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সমাজের সবস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার জন্য অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত এবং এর অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন।
সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পেয়ে থাকেন, তবে কোন পেনশন পান না। এছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতাবহির্ভূত থাকায় সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তন করেছে।
এছাড়া, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী দেশের সব মানুষের জন্য পেনশন স্কিমের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বা এর পরবর্তীতে যোগ দেয়া সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিজ্ঞপ্তিতে আরও স্পষ্ট করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো-
২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যে সব শিক্ষক/কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন, তারা আগের মতো সব পেনশন সুবিধা পাবেন।
বর্তমানে সরকারি পেনশনে ‘আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনেফিট’ সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। ফলে, পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। তবে এবার ‘ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি’ সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে মূলবেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা কেটে রাখা হবে এবং সেই একই পরিমাণ অর্থ সেই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাও যোগ করে কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কর্পাস একাউন্টে জমা করা হবে।
‘আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনেফিট’ সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ব্যবস্থা নয়। অন্যদিকে, ‘ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি’ পেনশন সিস্টেমে কন্ট্রিবিউশন এবং বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে, তাই এটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।
নতুন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে। এতে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এবং ইনক্লুসিভ ডেভলপমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে, তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশন প্রাপ্ত হন। তাই এ বিষয়টিকে নতুন নিয়োগ হিসাবে ধরা হয় না। তাই সে তার চলমান পেনশন ব্যবস্থার আওতায় থাকবে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালের ১ জুলাই বা তার পরে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করা শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কিম চালু হবে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যান। তাই ৬৫ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।
লাম্পগ্রান্ট ও পিআরএল অর্জিত ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে সুযোগ-সুবিধা আগের মতোই থাকবে।
কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এককালীন নয় বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং মাসিক পেনশনেরও কয়েকগুণ বেশি কাটা হলেও একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা দেবে। ফলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমা করা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তিনি মোট ২ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা পাবেন, যা তার জমার প্রায় সাড়ে ১২ গুণ বেশি। তাছাড়া পেনশনে যাবার পর কেউ ৩০ বছর জীবিত থাকলে, তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।
পুরাতন পেনশন ব্যবস্থায় বেঁচে থাকলে পেনশনার আজীবন পেনশন পান এবং তার অবর্তমানে পেনশনারের স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন, তবে পেনশনারের অবর্তমানে তার স্ত্রী বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন পাবেন। যেমন- একজন পেনশনার অবসরে যাবার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় ৫ বছর পেনশন পেয়ে মারা গেলে তার স্ত্রী বা নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন পাবেন।