যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসিসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা রোববার নিহত হন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের কাছে ওই দুর্ঘটনার পর বেল ২১২ হেলিকপ্টার নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, ইরান কেন এখনো প্রায় ৪৫ বছর আগের এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে? আর হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত কী দুর্ঘটনা না কি নাশকতা?
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব হয়। তার আগে দেশটিতে শাহদের শাসন চলছিল। ওই বিপ্লবের আগে বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টার কিনেছিলেন মাার্কিনঘেঁষা ইরানের সর্বশেষ শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি।
হেলিকপ্টার ওড়াতে পছন্দ করতেন তিনি। মাঝে মাঝেই ইরানিয়ান ইমপেরিয়াল এয়ার ফোর্সের মার্শালের পোশাক পরে হেলিকপ্টার ওড়াতেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থে বেল ২১২ হেলিকপ্টারের উৎপাদন শুরু হয়। পরে ১৯৮৮ সালে কানাডার কিউবেকের মিরাবেল শহরে এর ফ্যাক্টরি সরিয়ে নেওয়া হয়। অবশ্য ওই বছরই বেল ২১২ হেলিকপ্টারের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৬৮ সালে প্রথমবারের মতো সামরিক কাজে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটা বেসামরিক পরিবহনের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পাইলটসহ ১৫ জন আরোহী বহনের সক্ষমতা রয়েছে বেল ২১২ হেলিকপ্টারের। এই হেলিকপ্টারকে আগুন নির্বাপণের মিশনে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া কার্গো হিসেবে এবং স্থল বাহিনীকে সহায়তার জন্যও বেল ২১২ হেলিকপ্টার দারুণ মানানসই।
জানা গেছে, কিছুটা মডিফাই করে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি আরোহী বহনে আরও সক্ষম করা হয়েছিল।
বেল ২১২ হেলিকপ্টার এক বা দুজন পাইলট ওড়াতে পারেন। হেলিকপ্টারটি ১৭.৪১ মিটার বা প্রায় ৫৭ ফুট লম্বা। আর এর উচ্চতা ৩.৮৩ মিটার। যাত্রী বা মালপত্র ছাড়া এক একটি বেল ২১২ হেলিকপ্টারের ওজন ২ হাজার ৯৬২ কেজি। তবে উড্ডয়নের সময় সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৮০ কেজি পর্যন্ত বহনে সক্ষম বেল ২১২ হেলিকপ্টার। দুটি রোটরের এই হেলিকপ্টারে ১ হাজার ৩০০ কিলোওয়াটের ইঞ্জিন রয়েছে।
প্রতি ঘণ্টায় ১১৮ মাইল গতিতে উড়তে পারে বেল ২১২ হেলিকপ্টার। তবে কিন্তু কমবেট ফ্লাইটে প্রতি ঘণ্টায় গতি ১৩৭ মাইল পর্যন্ত ওঠানো সক্ষম। এই হেলিকপ্টার ২৭৩ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে। আর সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৩৮৮ ফুট উঁচুতে উঠতে সক্ষম বেল ২১২ হেলিকপ্টার। ইরান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, আর্জেন্টিনা, কানাডা, জাপান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশও বেল ২১২ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
বছরের পর বছর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে স্পেয়ার পার্টস কিনতে পারছিল না ইরান। তেহরানের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, স্পেয়ার পার্টসের অভাবেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, রাইসি ও তার সঙ্গীদের নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি ৪৫ বছর পুরোনা। ইরানের সেনাবাহিনীর কাছে এ ধরনের আরও ১০টি বেল ২১২ হেলিকপ্টার আছে বলেও মনে করা হয়।