ময়মনসিংহের ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মায়ের মৃত্যুর পর শিশু জায়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয় দুশ্চিন্তা। তার মামা রবিন মিয়া প্রথমে শিশুটিকে নিতে চাইলে পরে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসে। ওই অবস্থায় শিশু কল্যাণ বোর্ড শিশুটিকে নতুন একটি পরিবারের কাছে হাস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সোমবার রাতে গোপনীয়তা বজায় রেখে নতুন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জায়েদকে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত ৯ মে রাত থেকে চিকিৎসাধীন ছিল শিশু জায়েদ হোসেন। রোববার বেলা ১২ টায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় ১০ টি আবেদন নিয়ে আলোচনা হয়ে দুটি আবেদন নিয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করা হয়। বাচ্চাটি কার কাছে ভালো থাকবে, আবেদনকারীদের আন্তরিকতা, ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রশাসন জানায়, শিশুটিকে হস্তান্তরের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিলো। বিষয়টি নিয়ে আমরা সরেজমিন যাচাই বাছাই করা হয়। শিশুটির মামার পক্ষে নিজের তিন সন্তানের পাশাপাশি জায়েদকে লালন পালন সম্ভব নয়। মামা শিশুটিকে নেওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করে লিখিত আবেদন করে।
জানা যায়, শিশু জায়েদকে দত্তক নেওয়ার জন্য দশটি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যালোচনায় দুটি আবেদনকে অধিকতর যাচাই বাছাই করে বিত্তবান একটি পরিবারকে হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিবেচনার ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের পরিবার, সামাজিক, পেশা ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করা হয়।
শিশু কল্যাণ বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ পরিচালক আ: কাইয়ুম বলেন, একটি নিঃসন্তান ধনাঢ্য পরিবারের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। শিশুটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সেই পরিবারটি সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে চাননি।
তিনি আরও বলেন, শিশু আইনের ৮৪ ধারায় বলা রয়েছে বাচ্চা যদি তার পরিবারে যদি একীকরণ সম্ভব না হয় তাহলে শিশু কল্যাণ বোর্ড লালন পালনের অভিভাবকত্ব প্রদান করতে পারে, সেই ধারাকেই কাজে লাগানো হয়েছে।
শিশুটির মামা রবিন মিয়া বলেন, আমার ভাগ্নের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি নেইনি। সে ভালো একটি পরিবারে যাচ্ছে, উন্নত জীবন কাটাবে, শিক্ষাদীক্ষায় বড় হবে এই প্রত্যাশা করি।
গত ৯ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন নারী ও দেড় বছরের শিশু। আহত অবস্থায় তাদের প্রথমে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ মার্চ রাতে মারা যায় নারী। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ১১ মে রাতে পরিচয় শনাক্ত হয়। সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার কুসিউড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের মেয়ে জায়েদা আক্তার ভালুকায় বসবাস করে একটি জুতার কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার দেড় বছরের শিশু জায়েদ হোসেন। তবে শিশুটির বাবার পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশ শনাক্ত করে ভাই রবিন মিয়া। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল জায়েদা। ২০১৭ সালের দিকে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একাধিক বিয়ে হয় জায়েদার। গত ১২ মে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে জায়েদার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু শিশুটির পরিবারের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে হস্তান্তর করেনি। ঘটনার তিন দিনের মাথায় ১২ মে ভালুকা থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করে হাইওয়ে পুলিশ। এদিকে গত ১৩ এপ্রিল জায়েদকে তার মামার জিম্মায় দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভালুকা মডেল থানায় দায়ের করা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী গাড়ি এবং আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি আগামী ২০ মের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন, সুরতহাল প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি এম আর হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন।