বিদ্যালয় ছুটি হয়েছে। বিদ্যালয়ের দপ্তরিও শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগারের দরজা বন্ধ করে চলে যান। কিন্তু স্কুলের শৌচাগারে তখন আটকা পড়ে প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। ছয় ঘণ্টা শৌচাগারে আটকা থাকার পর সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ৯ নং পাঁচখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই শিশুর নাম রাফিন হোসেন (৬)। সে একই এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসে রাফিন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের শৌচাগারে যায় সে। শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা থাকার কারণে সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়। ছুটির ঘণ্টা পড়লে শ্রেণিকক্ষে থাকা সবাই বাড়িতে চলে যায়। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরি খোকন খান শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগারের দরজা তালাবদ্ধ করে চলে যান। এতে শৌচাগারের ভেতর আটকা পড়ে প্রথম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী। পরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে রাফিন। কিন্তু রাফিনের ডাক কেউ শুনতে পায়নি। ওই শিক্ষার্থী দুপুরের পর বাড়িতে না গেলে স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া এক পথচারী শিশুটির কান্নাকাটি শুনে কাছে ছুটে যান। পরে শৌচাগারের ভেতর শিশুটি আটকা পড়েছে বুঝতে পেরে তালা ভেঙে রাফিনকে উদ্ধার করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই শিশু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শিশুটির বাসায় গিয়ে কথা বলেছে। এ ঘটনায় কেউ ইচ্ছাকৃত করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, ‘স্কুল ছুটির পরে সব ক্লাসরুম, শৌচাগার ভেতরে চেক করে তারপর বিদ্যালয় তালা দেবেন দপ্তরি। কিন্তু সেটা না করে তালা দেওয়ার ফলে ওই স্কুলের শৌচাগারে এক শিক্ষার্থী আটকা পড়েছিল। বিষয়টি আমরা জেনেছি। কেন এমন ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুদের সঙ্গে এমন ঘটনা কাম্য নয়।’
মাদারীপুর জেলা শিশু একাডেমির কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার পরিণতি ১৯৮০ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ছুটির ঘণ্টার মতো হতে পারত। বিষয়টি দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক। এ ঘটনার দায় প্রধান শিক্ষক, দপ্তরি কেউই এড়াতে পারেন না। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি নিয়মিত মামলা হওয়া উচিত।