ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নারীর আহত শিশুসন্তান জায়েদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মামার জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আহত শিশুর উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শিশুটিকে তারা মামা নিজের জিম্মায় নিতে আগ্রহী হওয়ায় সুস্থ হওয়ার পর উপযুক্ত অভিভাবক হিসেবে প্রমাণসহ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার মামার কাছে দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (১৩ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ আর্জির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আদেশের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।
শুনানি শেষে আদালত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭, ১১২ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(১) ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করেন-
১. ভালুকা মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী গাড়ি এবং আসামি শনাক্ত ও গ্রেফতার করার জন্য ভালুকা থানার ওসি ও ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ।
২. আগামী ২০ মে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল, সুরতাল রিপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য আদালতে দাখিল করতে হবে।
৩. সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিআইজিকে মামলাটি তদারকি করার নির্দেশ।
৪. আসামি গ্রেফতারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে র্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ।
৫. ভিন্ন রূপ দাবি না থাকায় শিশুটির তত্ত্বাবধান ও হেফাজতের জন্য তার মামার কাছে অস্থায়ীভাবে হস্তান্তরের নির্দেশ।
৬. শিশুটির আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপসমূহ প্রতিবেদন আকারে আগামী ২০ মে আদালতে দাখিল করতে হবে।
৭. শিশুটির অভিভাবকত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে দরখাস্ত দাখিল ও নিষ্পত্তি করার নির্দেশ প্রদান।
পাশাপাশি ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জ লিগ্যাল এইড কমিটিকে এ বিষয়ে যথাযথ সহযোগিতা প্রদান করার নির্দেশ প্রদান।
জানা গেছে, শিশু জায়েদের নিহত মা জায়েদা (৩০) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কুসিউড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি আইডিয়াল মোড় এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে দুর্ঘটনার শিকার হন জায়েদা ও জায়েদ। দিবাগত রাত ৩টার দিকে জায়েদাকে শিশুসন্তানসহ ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কয়েকজন লোক তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখেই দ্রুত চলে যান। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার (১০ মে) রাত ৮টার দিকে জায়েদার মৃত্যু হয়।
শিশু জায়েদকে ভর্তি করা হয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার। মায়ের মৃত্যুর পর শিশুটির কান্না দেখে তাদের পরিচয় শনাক্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হলে শনিবার রাতে পরিচয় শনাক্ত হয়।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার (১২ মে) জায়েদার মরদেহ তার ভাইয়ের কাছে পুলিশ হস্তান্তর করলেও শিশু জায়েদ হোসেনকে হস্তান্তর করা হয়নি। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় তার চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তবে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিশুটির মামা রবিন মিয়া। রোববার বোনের মরদেহ ও ভাগনেকে নিতে হাসপাতালে আসেন রবিন মিয়া।