ময়মনসিংহ জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকান্ডের জেরে দুই বছরের মাথায় এই কমিটি বিলুপ্তি করা হয় বলে মনে করছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (৭ মে) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি এবং সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি’র সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ময়মনসিংহ জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হলো।
এর আগে, সম্প্রতি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য রানী মালার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করার ঘটনায় গত ২ মে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক স্বপ্না খন্দকারকে প্রধান আসামি করে মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়। পরে আদালত কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে বাদির অভিযোগটি এফআইআর করার আদেশ দিলে গতকাল মঙ্গলবার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে রানী মালা অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর আগে ময়মনসিংহ নগরীতে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক স্বপ্না খন্দকারের একটি বাসায় দাওয়াত খাওয়ানো শেষে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে একজন লোকের সঙ্গে বসিয়ে ভিডিও ধারণ করে। পরে ওই পুরুষের কাছ থেকে বø্যাকমেইল করে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নেয়। একই সঙ্গে ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি নিয়ে বিভিন্ন সময় নগদ টাকাও নেয়। বিষয়টি জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ককে জানানোর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন রানী।
রানী মালা আরও বলেন, আমি স্বপ্না খন্দকারের ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার শিকার। আমার মত আরও অনেক নারীই স্বপ্নার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে কিন্তু ভয়ে কেউ স্বপ্নার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। আমি চাই না আর কোন নারী এই ধরনের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হোক। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির আঁড়ালে স্বপ্না খন্দকার এই ধরনের অপরাধ করে আসছে। মূলত রাজনীতির আড়ালে এই ধরনের অপরাধের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকজনদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার পেশা ও নেশা। এভাবেই সে এই নগরীতে গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি বাড়ী, গাড়ী ও ব্যাংক ব্যালেন্স।
বিষয়টি নিয়ে স্বপ্না খন্দকারের ভাষ্য, আমার বাসায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। মেয়েটা (রানী) আমার বাসায় ভাড়া থাকতো। সেখানে প্রতিনিয়ত পুরুষ নিয়ে যেতো। আমি বিষয়টি জানতাম না। যখন আমি জানলাম তখন মাইর দিয়ে তাকে বের করে দিয়েছিলাম।
বিতর্কিত এসব কর্মকাণ্ডের কারণেই জেলা যুব মহিলা লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক বিলকিস খানম পাপড়ি। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ যুব মহিলা লীগ নিয়ে বেশি তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই মুহুর্তে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কেন্দ্রের উপায় ছিলো না। আমার নিজের মান-সম্মান রক্ষার জন্যও এটি ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এগুলো একেকজনের ব্যক্তিগত সমস্যা। বেশীরভাগ নারীর চরিত্র কলঙ্কিত। তারা যখন সংগঠনের পদে তাকে তখন ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো এসে পড়ে সংগঠনের ব্যানারে, তখন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য যারা আগামীতে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চরিত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জীবন বৃত্তান্ত দেখে নেতৃত্ব নির্বাচন করা উচিত। যেহেতু এটি নারী সংগঠন সেজন্য গুরুত্ব পদে অবশ্যই ব্যক্তিগত চরিত্র দেখে যেন দেয়া হয়, কমিটিতে যেন বিতর্কিত কাউকে না রাখা হয় এটিই আমি চাই।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুনে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট যুব মহিলা লীগের ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।