কার ঘুমের ধাঁচ কেমন হবে তা ঠিক করে দেয় আমাদের শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক। মস্তিষ্কের বিশেষ এক অংশে একটা ওই ঘড়িটা থাকে, যা বুঝিয়ে দেয় কখন দিন আর কখন রাত। বায়োলজিক্যাল ক্লকই শরীরকে বোঝায় কখন দিন কখন রাত। যার ঘুমের প্যাটার্ন যেমন, তার কিন্তু সেই সময়ই ঘুম পাবে। দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুম আদর্শ বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন চাহিদায় নির্বিঘ্নে ৮ ঘণ্টা ঘুম অনেকেই ঘুমোতে পারেন না। আবার কারও কারও শরীরে ক্লান্তি থাকা সত্ত্বেও ঘুম আসে না। আবার কেউ কেউ ৮ ঘণ্টা ঘুমনোর পরও ঢুলে পড়েন। এদের সারাদিনের মধ্যে ঘুমের ভাগ অনেকটাই বেশি। কোনও কোনও অসুখের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন ঘুমের পরিমান বেড়ে যায়।
এ বিষয় চিকিৎসকদের মতামত, আমাদের ঘুমের মধ্যে যে ভাগগুলো আছে, তা মূলত দুটি রেম (REM অর্থাৎ র্যাপিড আই মুভমেন্ট) ও NREM অর্থাৎ নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট। ৪ ঘণ্টার মধ্যে এই দুই পর্যায় আসে। এইরকম দুটি করে ৪ ঘণ্টার পর্যায়, মোট ৮ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। সাধারণত ৮ ঘণ্টা ঘুমের পর শরীরে আর ক্লান্তি অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। তবে যাদের তারপরও ক্লান্তি থেকে যায়, বুঝতে হবে শরীরে কোনও অসুখ-বিসুখ আছে।
যে সব কারণে বেশি ঘুম আসে-
হাইপো-থাইরয়েডিজম থাকলে তা অতিরিক্তি ঘুম ডেকে আনে। কিছুতেই যেন শরীর শক্তি পায় না। হাইপোথাইরয়েডের লক্ষণগুলো হলো- হরমোনের অপর্যাপ্ত নিঃসরণের ফলে শরীরে নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। যেমন- হজম ক্ষমতার সমস্যা, ক্লান্ত লাগা, অত্যধিক চুল পড়া, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি।
এ ছাড়াও আরও কিছু উপসর্গ সমস্যায় ফেলতে পারে, যেমন- শুষ্ক ত্বক, ভঙ্গুর নখ, পেশীর দুর্বলতা, মস্তিষ্কের মধ্যে একটা অস্থির ভাব, মেজাজ পরিবর্তন, অন্ত্রের স্বাস্থ্যের অবনতি, কোষ্ঠকাঠিন্য, মুখের ফোলাভাব, অন্যান্য অঙ্গের ফোলাভাব। এ ক্ষেত্রে ঘুমালেও যে এনার্জি বাড়বে এমন নয়। ক্লান্তিটা কিন্তু থেকেই যায়।
অ্যাডিশন ডিসিজ : এ ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে যে স্টেরয়েডধর্মী হরমোন আছে তা সঠিক পরিমাণে না বেরোলে শরীরে দুর্বলতা আসে। সেক্ষেত্রে দুর্বলতা একদমই কাটতে চায় না। এর জন্য অতিরিক্ত ঘুম পেতে পারে।
ঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া : যাদের টানা ঘুম হয় না কিংবা ঘুম বিচ্ছিন্নভাবে হয়, তাদের সারাদিন শরীরে ক্লান্তি বোধ থাকে। যারা বিভিন্ন শিফটে কাজ করেন, তাদের ঘুমের সময়টা প্রতিদিন এক নয়। তাই ঘুমালেও ক্লান্তি কাটতেই চায় না। কম ঘুম যেমন একটা অসুখ, অতিরিক্ত ঘুমও কিন্তু কোন অসুখের প্রভাবে ঘটে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমিয়েও যদি শরীরে ক্লান্তি না কাটে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে।