আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় পছন্দের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম। ওই উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়কে জেতাতে তিনি নানা কৌশলে জেলা শহরের নিজ বাসার সামনে জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করে তার হাতকে শক্তিশালী করতে ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহবান জানাচ্ছেন।
শনিবার রাতে জেলা শহরের গৌরীপুর মৈত্রীবাড়ি মাঠে বিশাল প্যান্ডেল বেঁধে ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি ওই প্রার্থীকে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, তার প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে তিনি নির্বাচিত হয়ে আসবেন। তিনি নির্বাচিত হলে তার মাধ্যমে আমি আপনাদের কাজ করতে পারব। সেইসাথে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাকে উপহার হিসেবে তুলে দিতে পারব- ইনশাআল্লাহ।
এ সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়সহ আওয়ামী লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, শাহাদাৎ হোসেন ও রুকনুজ্জামান পলাশ এবং বিএনপিদলীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য, আওয়ামী লীগের উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
দলীয়সহ নানা দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, একইভাবে শুক্রবার শেরপুর শহরের মৈত্রীবাড়ি মাঠে ঈদ পুনর্মিলনীর নামে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম। ওই সভায় অন্যান্যের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র আবু তাহের, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চাঁন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী অংশ নেন।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একজন প্রার্থীর পক্ষে দলীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুলের সরাসরি অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম আমিরুজ্জামান লেবু বলেন, এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত থাকায় দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের কারও পক্ষে কাজ না করতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়কে বিভিন্ন সভায় নিজের বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার পক্ষে কাজ করার জন্য ওয়াদা করাচ্ছেন। এটি দলীয় সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে তিনি দলীয় দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাবেন উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্য নিরপেক্ষ বা নীরব না থাকলে নির্বাচনে অবশ্যই প্রভাব পড়বে।
একই কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের অপর প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম তার পছন্দের প্রার্থী বিশ্বজিৎকে জেতাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ডেকে নিয়ে এবং সভা করে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রভাবিত করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এবারের দলীয়ভাবে উন্মুক্ত থাকা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এজন্য আমি নিন্দা প্রকাশ করে তার বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অন্যদিকে ওই বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম আমার বন্ধু মানুষ। তার সহযোগিতায় যদি আমি নির্বাচিত হতে পারি উপজেলার সব সমস্যার সমাধান করব। সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যদি একমুখী থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা অবহেলিত ঝিনাইগাতীর উন্নয়ন করতে পারব। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্য কোন প্রার্থী নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দুএকজন রয়েছেন। তবে নৌকার এমপির সমর্থন দলের নেতা হিসেবে আমার প্রতিই রয়েছে।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার নির্বাচন পরবর্তী কর্মীদের নিয়ে বসা হয়নি। তাই ঈদের পর পুনর্মিলনী করেছি। সেখানে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে তিনি ঢাকায় চলে যাবেন।
উল্লেখ্য, এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত টিকে থাকা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩, বিএনপির ৩ ও জাসদের একজন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৮ মে এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।