মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট অব্যাহতি আর বাড়ছে না। আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোর টিকিটে ভ্যাট দিতে হবে। ভ্যাটের হার হবে ১৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানিকে (ডিএমটিসিএল) চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
যাত্রীদের কথা চিন্তা করে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট অব্যাহতি দেয় এনবিআর। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে এ সুবিধা। ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়াতে সম্প্রতি এনবিআরকে চিঠি দেয় ডিএমটিসিএল। কিন্তু এ আবেদন নাকচ করে সংস্থাটি।
এনবিআর জানিয়েছে, উন্নয়নের চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়াতে সব খাতেই কর ছাড় কমানো হচ্ছে। তাই এ খাতের ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আর বাড়ানো হবে না। ফলে জুলাই থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় ১৫ টাকা ভ্যাট দিতে হবে মেট্রোরেলের যাত্রীদের।
এনবিআর দ্বিতীয় সচিব ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সীর সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল সেবার ওপর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রদত্ত অব্যাহতির মেয়াদ শেষে মূল্য সংযোজন কর আরোপ না করার জন্য ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী উন্নত দেশের কাতারে শামিলের লক্ষ্য সামনে রেখে দেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান। উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পাদনে সরকারকে প্রতিনিয়ত অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে, যা মূলত আহরিত হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে।
দেশীয় শিল্পের বিকাশ, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ ইত্যাদি লক্ষ্য সামনে রেখে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, উন্নয়নের বিপুল কর্মযজ্ঞে অর্থের জোগান অব্যাহত রাখাসহ দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং কর-জিডিপি অনুপাত কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করতে বিভিন্ন খাতের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে প্রদত্ত অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হচ্ছে, অর্থাৎ অব্যাহতির ক্ষেত্র সংকুচিত করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রদত্ত অব্যাহতির মেয়াদ শেষে পুনরায় আলোচ্য ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অপারগতা জ্ঞাপন করছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান আছে। মেট্রোরেল যেহেতু পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গণপরিবহন, তাই মেট্রোর ভাড়াতেও ভ্যাট আরোপ হওয়ার কথা।
তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আইন আছে। কিন্তু ওইসব ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণি ছাড়াও সাধারণ শ্রেণি আছে। টিকিটধারী যাত্রীরা তাদের শ্রেণি পছন্দ করার সুযোগ পান। অন্যদিকে ঢাকার মেট্রোরেলই পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সব যাত্রীর একই টিকিট কাটতে হয়। এছাড়া মেট্রোরেল এখন পুরোপুরি গণপরিবহন, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভ্রমণ করেন।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাট আরোপ নিয়ে এনবিআর ও মেট্রোরেল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে একটি বৈঠক হয়। সেখানে এনবিআরের প্রস্তাব নাকচ করেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
পরে মেট্রোরেলে কর্তৃপক্ষ টিকিটের ওপর ভ্যাট না বসানোর যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়।
গত বছরের ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে চিঠি দেন। পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়। তবে ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)
আওতায় মেট্রোরেল লাইন-৬ এর মাধ্যমে প্রথমে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত এ রেল চালু হবে বলে আশা করে ডিএমটিসিএল।
ডিএমটিসিএলের ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। এছাড়া যে কোনো দূরত্বে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। তবে এ ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে ২০ টাকার ভাড়া বেড়ে হবে ২৩ টাকা।