হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দুর্নীতির ১১ মামলার মধ্যে এক মামলার রায়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ মোট ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি তানভীর মাহমুদ ও জেসমিন ইসলামকে ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতারণরা মামলার আরেক ধারায় তাঁদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেমের আদালত এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন—প্রতিষ্ঠানটির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহম্মেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগণ গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আব্দুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান।
যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি তাঁদের ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতারণরার আরেক ধারায় তাঁদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ সাত কর্মকর্তা—প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সাবেক জিএম ননী গোপাল নাথ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিএমডি মাইনুল হক, উপ- মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হাসান খান ও সোনালী ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মেরীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণার আরেক ধারায় তাঁদের সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে এক ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এ ধরনের দুর্নীতি হলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। আইনে এর সাজা মৃত্যুদণ্ড থাকলে আদালত তাই দিতেন বলে বিচারক তাঁর রায়ের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী বলেন, রায় সঠিক হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, হাইকোর্টে আপিল করে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে।
গত ২৮ জানুয়ারি মামলার যুক্তি–তর্কের শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেছিলেন। তবে ওই দিন রায় থেকে মামলাটি উত্তোলন করে আরও দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর দুই ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ১২ মার্চ দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ১৯ মার্চ ঠিক করা হয়।
মামলায় অস্তিত্বহীন ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন আসামিরা। মামলায় আদালত চার্জশিটের মোট ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।
উল্লেখ্য, হলমার্ক কেলেঙ্কারির মোট মামলা ছিল ৩৯ টি। এর মধ্যে অর্থ কেলেঙ্কারির ১১টি মামলার মধ্যে আজ একটি মামলার রায় ঘোষণা দেওয়া হলো।