জাপানের ইয়ামাগাথা অঞ্চলের বিখ্যাত গবাদিপশুর ব্রিড জাপানিজ ব্ল্যাক। বুঝতেই পারছেন এ ধরনের গরুদের গায়ের রং কালো। তবে এখন এদের বেশির ভাগকে দেখে যতটা না গরু তার চেয়ে বেশি জেব্রা বলে মনে হতে পারে আপনার।
এসব তথ্য জানা যায় চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে।
ইয়ামাগাথা প্রশাসনের নিযুক্ত বিজ্ঞানীদের গত তিন বছরের গবেষণা অনুসারে, ডোরাকাটা গবাদিপশু স্বাভাবিক রঙের গবাদিপশুর তুলনায় মাছিদের কম আকৃষ্ট করে। আর তাই ইয়ামাগাথার খামারিরা তাদের গরুগুলির শরীরে জেব্রার মতো ডোরা রং করে দিচ্ছেন।
জাপানিজ ব্ল্যাক ব্রিড হলো চার ধরনের জাপানি গবাদিপশুর একটি, যেগুলি ভালো মানের ওয়াগিউ মাংস উৎপাদন করে। কিন্তু কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, তাঁদের গরুর পাল রক্তচোষা পোকামাকড়, যেমন গবাদিপশুর মাছিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি গবাদিপশুদের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। অস্বস্তি, ব্যথার সৃষ্টির পাশাপাশি পশুদের প্রজনন হারকেও প্রভাবিত করে এ ধরনের মাছি।
‘অনেক কৃষক তাঁদের গবাদিপশুকে মাঠে চ দ্বিধায় ভুগছেন। প্রাণীগুলো মাছিদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে।’ অঞ্চলটির কৃষি প্রচার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন জাপানি সংবাদমাধ্যম দ্য মেইনিচিকে।
‘তবে এখন আমরা আশা করছি, পশুদের শরীরে ডোরাকাটা দাগের ব্যবস্থা করলে তারা স্বচ্ছন্দে এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারবে।’ বলেন ওই কর্মকর্তা।
বিজ্ঞানীরা ডোরাকাটা দ্রবণের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন গবাদিপশুদের মনোযেগের সঙ্গে দেখে। রংহীন গবাদিপশুর পাশাপাশি মাঠে চড়তে দেওয়া হয় ডোরাকাটা গরুকেও।
গবেষকেরা গবাদিপশুদের পরীক্ষা করেন এদের লেজ ঝাঁকানো, মাথা নাড়ানো বা খুর ঝাঁকি দেওয়ার সংখ্যা গুণে। এগুলো মাছিকে তাড়ানো কিংবা দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। গবেষকেরা আবিষ্কার করেন, ডোরাকাটা করা হয়নি এমন গবাদিপশু প্রতি মিনিটে ১৬ বার এ ধরনের বিরক্তি প্রকাশ করলেও কৃত্রিম ডোরা আছে এমন প্রাণীরা প্রতি মিনিটে মাত্র পাঁচবার এমন আচরণ করে।
গবেষকেরা মাছিরা কেন ডোরাকাটা গবাদিপশুর প্রতি কম আগ্রহী তার কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিতে পারেননি। তবে গোটা অঞ্চলের কৃষকদের তারা যে ফলাফল পেয়েছেন তা জানিয়েছেন।
একজন খামারি মন্তব্য করেছেন যে গবাদিপশুর পরিস্থিতির এই উন্নতি সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। তিনি যোগ করেন, এটা দেখেও খুশি হয়েছেন যে রং না করা গবাদিপশুগুলি তাদের ডোরাকাটা সঙ্গীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। অর্থাৎ মিলে-মিশেই থাকছে এরা।