২০২৪ সালে দশ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাদের একজন ময়মনসিংহের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরিশংকর দাশ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি এই পদক পাচ্ছেন। শুক্রবারমন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে কল দিয়ে বিষয়টি জানানো হলে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিনি।
পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত ১০ জনের তালিকা প্রকাশের পর থেকে শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন ডা. হরিশংকর দাস। ময়মনসিংহ নগরের চরপাড়াস্থ পারমিতা চক্ষু হাসপাতালের সত্ত্বাধিকারী তিনি। শনিবার বিকেলে তার চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনকার মতো এদিনও স্বাভাবিকভাবেই রোগী দেখছেন স্বাধীনতা পদক পাওয়া এই চিকিৎসক। ডা. হরিশংকর দাস মনে করেন- বাংলাদেশ যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে। তাদের মূল্যায়ন হয়, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
প্রতিক্রিয়ায় ডা. হরিশংকর বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে আমি মানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। রোগী দেখাই আমার পেশা এবং নেশা। কে পয়সা দিতে পারল, কে দিতে পারল না, এটা আমি দেখি না। আমি বিনা পয়সায় অনেক রোগীর অপারেশন করে দিয়েছি। তাছাড়া অনেক গরীব রোগী, যারা ঔষধ কিনতে পারেনা, তাদের আমি ফ্রি ওষুধও দিয়ে থাকি। কোন রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় ফেরত না যায়- এটাই মূল লক্ষ্য। এভাবেই আমি চলছি, আমৃত্যু রোগীরসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
কর্মজীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন ডা. হরিশংকর। এবার স্বাধীনতা পদকের কথা শুনে তিনি বেশ অবাক হয়েছিলেন। ডা. হরিশংকর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রথম যখন আমাকে জানানো হলো তখন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। এটা ফেক কিনা আমি বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমার পরিচিত বন্ধু, ময়নসিংহের সাবেক ডিসি লোকমান হোসেনকে বিষয়টি জানাই। তখন উনি বললেন- এক মিনিট, আমি বিষয়টি জানাচ্ছি। তারপরেই তিনি আমাকে ফোন দিয়ে বললেন- কংগ্রাচুলেশন।
তখন আমার এই অনুভূতি তৈরি হলো যে- আমি এতদিন নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেলাম। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রজ্ঞা, মেধা এবং দূরদর্শিতার মাধ্যমে এই জিনিসটি উনি বুঝতে পেরেছেন। যারা সেবা করতে পারে তাদের মূল্যায়ন উনি করতে পারেন। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী স্থাপন করেছেন। যা আমাকে দারুনভাবে উৎসাহিত করেছে।
স্বাধীনতা পদতে মনোনীত হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন বিশিষ্ট এই চক্ষু চিকিৎসক। তিনি বলেন, এর আগেও আমি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তবে এবারের যে পুরস্কার তা রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার। স্বাভাবিকভাবেই আমি উচ্ছ¡সিত আনন্দিত ও প্রলোভিত। আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ, সাধুবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমি যতদিন বেঁচে থাকি এভাবেই মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের নিকলা দাশ বারে প্রয়াত ইন্দুভূষণ দাশ ও রেণুকা প্রভা দাশের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর মমেক-এ সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। পরে তিনি ১৯৮৩ সালে চক্ষু চিকিৎসায় উন্নত ডিগ্রী নিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। সেখান থেকে ডিও এবং এম.এ. এম. এস. ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফেরেন। ১৯৮৪ সালে পারমিতা চক্ষু হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই প্রতিদিন এক ঘন্টা বিনামূল্যে রোগী দেখেন এবং প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতেও ফ্রি রোগী দেখেন। খ্যাতিমান অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরিশংকর দাশ বিগত কর্মজীবনে মুক্তিযোদ্ধা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী-পরিচিতজন ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ অসংখ্য গরীব ও অসহায় রোগীদের কোনো পরামর্শ ফি ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন।