1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টার : স্টাফ রিপোর্টার
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
‘গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ বরিশাল থেকে ধরে আনা কর্মকর্তাকে ঢাকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ হাজী সেলিমের ছেলে সাবেক এমপি সোলাইমান গ্রেপ্তার আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন: ড. ইউনূস আইন করে কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি দেয়া অবৈধ ছিল : হাইকোর্টের রায় শেয়ারবাজারে কারসাজিতে সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা হয়েছে ৫০ লাখ বিদ্যুৎ নিয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে ভারত: মির্জা ফখরুল নাহিদ-আসিফরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই নেমেছিল: সারজিস বাংলাদেশিদের ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ দেবে আল-আজহার

চলন্ত তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে মানবতার দৃষ্টান্ত গড়লেন চিকিৎসক-টিটিই

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪

চলন্ত আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চিকিৎসক, টিটিইসহ একদল মানুষ। অপর ট্রেনে ডিউটিরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া লোকোমাস্টারের (ট্রেন চালক) পাশে দাঁড়ালেন হাতে হাত রেখে। আর তাতে প্রাণে বেঁচে যান  লোকোমাস্টার।

মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) আমিন ফরাজির ফেসবুক পোস্টে।

আমিন ফরাজির ফেসবুক পোস্ট:

গতকাল চাকরি জীবনের বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। ডিউটি ছিল প্রিয় তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে। ১০.৩০ এর ট্রেন ময়মনসিংহ আসলো ১২ টায়। মনটাই খারাপ। জুম্মার নামাজটা পড়া হবেনা!

মন খারাপ ঝেড়ে ফেলে দায়িত্বের তাগিদে চেকিং শুরু করলাম। একটানা প্রায় ৪০ মিনিট চেক করার পর ট্রেন এসে থামলো নুরুন্দি স্টেশনে। অথচ এই স্টেশনে ট্রেনটির যাত্রাবিরতী নেই। কৌতুহলবশত অনির্ধারিত এই যাত্রাবিরতির কারণ খুজতে গিয়ে দেখতে পেলাম পাশের লাইনে আরেকটি লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে ক্রসিংয়ের জন্য দাঁড়ানোর কথানা! হঠাৎ শুনতে পেলাম পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের এলএম (ট্রেনচালক) সাহেব স্ট্রোক করেছেন। তাকে আমার ট্রেনে উঠিয়ে জামালপুর হাসপাতালে নেয়া হবে। দৌড়ে গেলাম তার কাছে। দেখি আমাদের দেওয়ানগঞ্জ লোকোসেডের এলএম মল্লুক ভাই স্ট্রোক করেছেন। তাকে তড়িঘড়ি করে জ কোচে উঠানো হল। কিন্তু কোন সিট খালি নেই। দুজন ভদ্রলোক তাদের আসন ছেড়ে দিলে মল্লুক ভাইকে সেখানে বসানো হল। চেহারা দেখে অনুমান করলাম অবস্থা সম্ভবত খুব একটা ভালো না।
তড়িঘড়ি করে ডাক্টারের খোঁজ করলাম। ভাগ্যবশত সেই কোচেই ডাক্টার পেয়ে গেলাম। আসলে ডাক্তার না, বলতে পারেন আল্লাহর পাঠানো ফেরেশতা পেয়ে গেলাম।

ডাক্তার সাহেব রোগীর অবস্থা দেখেই বুজতে পারলেন অবস্থা ভাল না। রোগী কোন কথা বলতে পারছেনা। হালকা ইশারা করতে পারছে শুধু। বুজতে পারলেন স্ট্রোক হয়েছে। বললেন ট্রেনে অমুক অমুক ঔষধ আছে কিনা। না বলার পর খোঁজ নিতে বললেন ট্রেনে কোন হার্টের রোগী আছে কিনা, থাকলে তার কাছে ঔষধ থাকতে পারে। সৃষ্টিকর্তার কি অসীম দয়া সাথে সাথেই একজন হার্টের রোগী পেয়ে গেলাম এবং তার কাছে প্রয়োজনীয় তিনটি ঔষধের দুটি পাওয়া গেল। ডাক্তার সাহেব আর আমি নিজ হাতে চারটি চারটি আটটি ট্যাবলেট খায়িয়ে দিলাম। ডাক্তার সাহেব বললেন রোগীকে কাছেই হাসপাতালে নিতে হবে। পরবর্তী যাত্রাবিরতি জামালপুর। কিন্তু বিধিবাম জামালপুর স্টেশন মাষ্টারের নাম্বার নেই। ফোন করলাম ময়মনসিংহে অবস্থানরত আমাদের প্রিয় টিআইসি শাহীন স্যারকে। স্যার কে প্রয়োজনীয় সবকিছু বলার পর তিনি জামালপুর স্টেশন মাষ্টারের সাথে যোগাযোগ করলেন। এদিক দিয়ে রোগীকে নেয়ার জন্য এম্বুলেন্স প্রয়োজন। ফোন দিলাম জামালপুর জিআরপি থানার সেকেন্ড অফিসার তারা ভাইকে। ভাইকে সবকিছু খুলে বলার পর বললেন ফায়ার সার্ভিসের এম্বুলেন্স আনা যাবে। বললাম তারাতাড়ি সেটাই করেন।

এদিকে একটু পর রোগীর অবস্থা কিছুটা ভালো হচ্ছে মনে হচ্ছিল। ঔষধ কাজ করছিল হয়ত। কিন্তু হাসপাতালে নিতেই হবে। ডাক্তার সাহেব তখনো রোগীর সাথে। উনি উনার কাজ করেই চলেছেন। পুরো সময়ের মধ্যে এক মিনিটের জন্যও তিনি রোগীর কাছ থেকে সরেননি। এরই মাঝে ট্রেন জামালপুর চলে আসল। মল্লুক ভাইকে নামানো হল ট্রেন থেকে। সেকেন্ড অফিসার তারা ভাই তার দুজন কনস্টেবল এবং জামালপুর স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাষ্টারকে সাথে নিয়ে রোগীকে বুজে নিলেন। এরপর খুব দ্রুতই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। আমার গন্তব্যস্থল পর্যন্ত ডিউটি থাকায় আমি আর সাথে যেতে পারিনি।

ট্রেনে উঠে আবার সেই ডাক্তার সাহেবের কাছে গেলাম। তার সাথে পরিচিত হলাম। মহান এই মানুষটির নাম ডাক্তার কাজী জুবায়ের হাসান। তিনি একজন কার্ডিওলজিষ্ট। কর্মরত আছেন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। নিজের অন্তরের অন্তস্থল থেকে এবং আমার রেলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানালাম। স্যার বললেন আর ১০-১৫ মিনিট দেরি হলে হয়ত কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। ভাগ্য ভালো প্রয়োজনীয় ঔষধ দুটো পাওয়া গিয়েছিল। কথা বললাম ঔষধ দিয়ে সাহায্য করা সেই মানুষটির সাথে। তার নাম হানিফ উদ্দিন। বাড়ি জামালপুরেই। তাকেও ধন্যবাদ জানালাম।

পুরো ঘটনাটি আমার কাছে মিরাকল লেগেছে। ভাবতেই পারিনি এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হব কিংবা এর সাথে নিজেও এভাবে জড়িয়ে যাব। সবকিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

ভালো থাকুক সেই মহান ডাক্তার জুবায়ের স্যার, ঔষধ দিয়ে সাহায্য করা হানিফ সাহেব এবং নানাভাবে এই ঘটনায় সাহায্য করা প্রতিটি মানুষ। জয় হোক মানবিকতার। মহান সৃষ্টিকর্তা সবাইকে যেন এর উত্তম প্রতিদান দান করে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩