পবিত্র রমজান এলে বাজারে খেজুরের চাহিদা বাড়ে। ইফতারে সবাই চেষ্টা করেন খেজুর রাখার। বাজারে জাত ও মানভেদে নির্ধারণ হয় খেজুরের দাম। তবে এবার সব ধরনের খেজুরই চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক কম দামের কারণে সাধারণ মানুষের পছন্দের তালিকায় ছিল বরই, জাহিদি ও দাবাস জাতের খেজুর। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর এসব খেজুরের দামও ৬০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া ভালোমানের খেজুরের দামও বেড়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর খুচরা বাজারের খেজুরের দোকানগুলোতে দামের এই চিত্র দেখা যায়।
বাজারে সবচেয়ে কম দামি খেজুর জাহিদি জাতের। খেজুরটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এই জাতের খেজুরের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
এ ছাড়া দাবাস খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২৮০ টাকা কেজি দরে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে ৪৫০ টাকা। এই খেজুরের দামও বেড়েছে ৬২ শতাংশ। এ ছাড়া বরই নামে পরিচিত খেজুরের দামও বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। গত বছর প্রতি কেজি ২৫০ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। বাসাবোর হাসান স্টোরের ইমরুল কায়েস বলেন, সব খেজুরের দামই বেড়েছে। কোনো কোনো খেজুরের দাম কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়েছে। এখন ৩০০ টাকার নিচে খেজুর বিক্রি করা যায় না। অনলাইনে যারা খেজুর বিক্রি করে তারা আরও বেশি দামে বিক্রি করে।
আজওয়া, মাবরুম, মরিয়ম জাতের খেজুরের চাহিদাও রয়েছে বাজারে অনেক। এক বছরে এসব খেজুরের দামও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আজওয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা, যা গত বছর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। মাবরুম বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। মেডজুল বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। আলজেরিয়া বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪০০ টাকা। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর খেজুর আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর মিলিয়ে ১০ শতাংশ শুল্কহার ছিল। অর্থাৎ ১০০ টাকার খেজুর আমদানি করলে শুল্ককর দিতে হতো ১০ টাকা। চলতি অর্থবছরে সেই শুল্কহার বেড়েছে। বর্তমানে খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে।
খিলগাঁও বাজারের জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্সের কামাল হোসেন বলেন, গতবার ৬৫০ টাকায় আজওয়া বিক্রি করেছিলাম, এবার ৯০০ টাকার বেশি। আমাদের বেশি দামেই এবার খেজুর কিনতে হয়েছে। রমজানের পণ্য নিয়ে কোনো লুকোচুরি করি না, সীমিত লাভ করে বিক্রি করি। খিলগাঁও বাজারের আল আমিন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, খেজুরের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। আমাদের বিক্রিও এবার কম হচ্ছে। অনেকেই দুই কেজির জায়গায় এক কেজি কিনছে। কেউ কেউ দামি খেজুরের জায়গায় কম দামি খেজুর কিনছে।
এদিকে খেজুরের দাম প্রসঙ্গে বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, খেজুরের দাম কমানো হবে কোথাও বলা হয়নি। বলা হয়েছে, যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হবে। আমরা রমজানের আগে আমদানি শুল্ক কমানোর কথা বলেছি। ট্যারিফ কমিশন বিষয়টি দেখছে। তিনি বলেন, সব সময়ই এক দল লোক থাকবে যারা ব্যবসায়িক সুযোগ নিয়ে মানুষের কষ্ট বাড়াবে। তারা প্রকৃত ব্যবসায়ী না। কারণ, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা করতে হলে মানুষকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিতে হবে। তাহলেই কিন্তু মানুষ তাদের কাছে বারবার আসবে।