পণ্যবাহী ট্রাকে বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে। ঢাকায় অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থার মুখপাত্র খন্দকার আল-মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
মঈন বলেন, সম্প্রতি অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ জন্য আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখ ও পাইকারি বাজার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের সময় হাতেনাতে ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শনিবার ভোররাতে একযোগে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, ইত্তেফাক মোড়, টিটিপাড়া, কাজলা, গাবতলী ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. জাবেদ, মো. আরিফ, আবুল হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মো. আলী হোসেন, মো. রাকিব হাসান, মো. ফালান মিয়া, মো. সাকিব আলী, মো. বাবলু, মো. রাজাসহ ৬৩ জন।
তাঁদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, একটি লেজার রশ্মির লাইট, সিটি করপোরেশনসহ ছয়টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যাকেট, দুটি অন্যান্য লাইট, চারটি আইডি কার্ড, ৪১টি মোবাইল ফোন এবং বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায়ের রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে।
খন্দকার মঈন বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা তথাকথিত ইজারাদারদের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতি রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তাঁরা লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা চাঁদা আদায়ের রসিদও প্রদান করে থাকেন। চালকেরা তাঁদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গাড়ি ভাঙচুর, চালক-হেলপারকে মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। তাঁরা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন থেকে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন। কখনো সিটি করপোরেশন, কখনো শ্রমিক সংগঠন, কখনো কল্যাণ সমিতি, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে এই চাঁদা আদায় করা হয়।
খন্দকার মঈন বলেন, মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা দিয়ে যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করে, তখন চাঁদা উত্তোলন শুরু হয়। একটি গ্রুপ চাঁদা উত্তোলন করে কথিত ইজারাদারদের কাছে জমা দেয়। তারা সিন্ডিকেটের মধ্যে টাকা ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়। চাঁদা উত্তোলনকারীরা প্রতি রাতে মজুরি হিসেবে ৬০০-৭০০ টাকা পান। প্রতিটি স্পট থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে খন্দকার মঈন বলেন, ‘রমজান সামনে রেখে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ওপরের লেভেলের কয়েকজনের নাম পেয়েছি, আমরা তা যাচাই-বাছাই করছি। তারা যে সংস্থারই হোক অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ হোক, এমনকি আমাদের কোনো সদস্য হলেও তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।’