প্রথমবারের মতো সড়কে দুর্ঘটনা ও হতাহতের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সরকার। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৪ জন। বেসরকারি সংগঠনগুলোর তুলনায় সরকারি পরিসংখ্যানে হতাহতের সংখ্যা কম। তবে পুলিশের প্রতিবেদনের চেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে ৩১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। এই সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলেছে বিআরটিএ।
মঙ্গলবার রাজধানী বনানীতে সংস্থার সদর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানিয়েছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, গত বছর দুর্ঘটনায় পতিত ৭ হাজার ৮৩৭টি যানবাহন চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল, ১ হাজার ৭৪৭টি ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সড়কে ৬ হাজার ২৬১ দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত হন। আরেক বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ হাজার ৯১১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, ৫ হাজার ৯৩ দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৭৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অতিরঞ্জিত। বিআরটিএ দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। কোনো তথ্য বাদ গেলে তা জানানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বেসরকারি সংগঠনগুলো কিছুই জানায়নি। এতে দুর্ঘটনায় পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পুলিশ ও অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্যের সঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করছে। গত বছরের ১১ মাসে ২ হাজার ৪৩৭ হাসপাতালে মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৫৮৭। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ওই বছর ৫ হাজার ৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, হু প্রতিবেদন প্রকাশ করে না, কম্পিউটার নির্ভর রিগ্রেশন মডেল ব্যবহার করে প্রাক্কলিত সংখ্যা জানায়। যার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ২০২১ সালে ভারতে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭২ জন। হু’র প্রাক্কলন অনুযায়ী ওই বছরে ভারতে নিহত হয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১৮ জন। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ও প্রাক্কলনের অনুপাত ১ : ১.৪। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১ : ৬.২১, যা বৈষম্যমূলক। সড়ক পরিবহন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া তথ্য প্রকাশ না করতে হু’কে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার অনুরোধ রাখা হয়নি।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান রাখছে বিআরটিএ। সংস্থাটির সহকারী পরিচালকরা দৈনিক জেলা পর্যায় থেকে পাওয়া দুর্ঘটনার তথ্য রাখেন। তা দৈনিক ও মাসিক হিসাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৫৬৬ দুর্ঘটনায় ৫৩৩ জন প্রাণ হারান। পুরো বছরে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন।