অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় টেলিভিশন ও বেতারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণের ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ১৭টি দল ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার প্রচার করেছে। আজ শেষ দিনে ভাষণ দিলেন আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা।
আজ দেওয়া ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথপরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি, তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়স্বজন সকলকে হারিয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি শুধু আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার। কিন্তু বাবার কথা ভেবে, আপনাদের কথা ভেবে আমি পিছপা হইনি। যত দিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, তত দিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসব না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজ তাঁর শাসনামলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃত বর্ণনা তুলে ধরেন। তবে তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সব সময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি, তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে মাঝেমধ্যে মনুষ্যসৃষ্ট, প্রাকৃতিক এবং বৈশ্বিক বাধাবিপত্তি আমাদের চলার গতিপথকে মন্থর করেছে। ২০১৩-১৬ সময়ে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে ২০২০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সকল দেশের। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
শেখ হাসিনা নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, ‘মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিব।’