ছড়ায় ছড়ায় ঝুলে আছে শিম। আবার কোথাও ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিমগাছ। দাম বেশি, তাই খেত থেকে শিম তুলছেন কৃষকেরা।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল। এই অঞ্চলের ভাটিচর নওপাড়া, উজান চরনওপাড়া, চরলক্ষীদিয়া, জাদুয়ার চর, রামমোহন, চরখেওয়ার আলগীসহ প্রায় দশ গ্রামে বিস্তৃত বিশাল চরে এ বছর শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় শিমের বাম্পার ফলন ও বাজার দর ভালো থাকায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। এসব শিম উপজেলার বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে বাইরের জেলা-উপজেলাগুলোতে। এতে একদিকে যেমন শিম চাষে আগ্রহ বেড়েছে অন্যদিকে আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসব শিম ক্ষেতের পরিচর্যা, শিম উত্তোলন ও বাজারজাতকরণের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ওই এলাকার ২ শতাধিক শ্রমিক। শিম চাষি ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সপ্তাহে তারা দুইবার শিম তুলে বিক্রি করতে পারেন ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে ১৩ টন হারে শিমের মোট ফলন হয়েছিল ৪৪২০ মেট্রিকটন। এবছর ৩৯০ হেক্টর জমিতে ১৩ মেট্রিক টন হারে ৫০৭০ মে.টন ফলনের আশা করছে কৃষি অফিস উৎপাদিত শিমের জাতের মধ্যে রয়েছে বারি শিম-২, বারি শিম-৪, নলডুগ এবং আশ্বিনা। বারি শিম-২ স্থানীয়ভাবে ঢাকাইয়া শিম নামে পরিচিত। উপজেলায় এ জাতের শিমের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়।
২’শ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচরনওপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল আজিজ (৪৮) ও মো. মনির হোসেন (২৮)। তারা জানান, পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এবছর শিমের ভালো ফলন হয়েছে। সেইসাথে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তারা অনেক লাভবান। ৪ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা দরে ইতোমধ্যে তারা ৩৫০ মণ শিম বিক্রি করেছেন। আরও ১০০ মণ শিম বিক্রির আশা করছেন এই দুই শিম চাষি। তবে চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা না থাকায় আক্ষেপ তাদের।
এইক গ্রামের প্রয়াত কৃষক আ.লতিফের পুত্র মো. মেহেদী হাসান বলেন, তিন বছর আগে আমার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর শিম ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করেই আমি সংসারের হাল ধরেছি। নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শিমের ভালো ফলন হয়েছে। ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা করতে পারলে শিম আরও বেশি হতো।
শিম ক্ষেত পরিচর্যা করছেন নূর জাহান বেগম নামের একজন নারী শ্রমিক। তিনি বলেন,দৈনিক ৩০০ টাকার চুক্তিতে মালিকের বাড়িতে একবেলা খাবার খেয়ে সারাদিন শিম উত্তোলন ও ক্ষেতের পরিচর্যা করি। মালিক প্রতিদিন শিমও দেন। এই বাড়তি আয়ে আমরা সংসারের অভাব মিটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের নিয়ে আমরা সভা করেছি। কৃষি অফিস থেকে তাদের সার ও বীজও দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন পরামর্শও দিয়ে আসছি। সে হিসেবে চাষিরা শিমক্ষেতে ভালো ফলন পাচ্ছেন। দামও ভালো পাওয়ায় উপজেলায় এবছর শিমের চাষ বেড়েছে।’