আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের হার প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, আমরা একটি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ তৈরি করেছি। সেই অ্যাপের মাধ্যমে দুই ঘণ্টা পরপর কত শতাংশ ভোট হলো তা দেখা হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে তা দেখতে পারবে। যদি দেখা যায়, বেলা ২ টায় ২০ শতাংশ ভোট হলো আর তিনটায় গিয়ে ৯০ শতাংশ হয়ে গেলো সেটা তো বিশ্বাস যোগ্য হবে না। যারা প্রার্থী তারাও এটি ট্র্যাক করতে পারবে, সাধারণ ভোটাররাও এটি ট্র্যাক করতে পারবে।
রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে জেলার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী সহকারী রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ কমকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিমিয় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ।
ভোট এক জায়গায় দিলে আরেক জায়গায় চলে যাবে এটি সত্য নয় জানিয়ে সিইসি বলেন, অনেককে বলতে দেখা যায় কি নির্বাচন করবো ভোট এখানে দিলে ওখানে চলে যাবে। এগুলো অবান্তর ভ্রান্ত প্রচারণা। এই প্র্রচারণাগুলোকে বিশ্বাস করবেন না। এটা সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হয় আপনারা নির্বাচন কমিশনে আসবেন, আমি নিজে তদন্ত করবো কীভাবে সম্ভব হলো। প্রশাসনের ওপর আমাদের আস্থা আছে।
পোলিং এজেন্টকে বের করে দিলে কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট কেন্দ্রের ভেতরের ভারসাম্য রক্ষা করবে পোলিং এজেন্ট। পোলিং এজেন্ট না রাখলে হবে না। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে পোলিং এজেন্টকে ভেতরে থাকতেই হবে।
তিনি বলেন, পোলিং এজেন্ট না রেখে নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর বলা হল আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাহলে তো হলো না। যদি কাউকে বের করে দেয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নালিশ করতে হবে। ভিতরে যদি ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে প্রিজাইডিং অফিসার সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহন বন্ধ করে দিবে। পরে রিটানিং অফিসারকে খবর দিয়ে ওই কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দিবে। ওই কেন্দ্রের ভোট আরেকবার নিব, প্রয়োজনে ১০ বার ভোট নেব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবে। আনসার ও ভিডিপি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। তারা ১২ জন থাকবে, তাদের মাঝে কেউ কেউ সশন্ত্র অবস্থায় থাকবে। কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন থাকবে। যদি শুধু ১২ জন পুলিশ সদস্য থাকত, তাহলে প্রার্থীরা পুলিশকে হাত করতে পারত। কিন্তু কেন্দ্রে যদি ৫ টি বাহিনীর লোক থাকে, তাহলে কাউকে হাত করতে পারবে না। কাজেই সেখানে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব থাকবে। আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনী থাকবে। কাজেই কেন্দ্রের বাহিরের যে অংশ, তা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে।
কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে চাইলেই শাস্তির আওতায় আনা বলে জানিয়ে সিইসি বলেন, ওসি, এসপি, ডিআইজি, আইজি যিনিই যে কেন্দ্রেই যাক না কেন, খেলাটা হবে কিন্তু প্রার্থীদের মাঝে ভোটের দিন। কেন্দ্রের ভিতরে কিন্তু আইজি-ডিআইজি ঢুকতে পারবে না। শুধুমাত্র রিটার্নিং অফিসার কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে। প্রিজাইডিং অফিসার যদি কেন্দ্রে তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে। তাহলে ওসি, ইউএনও, এসপি, ডিআইজি, কিছুই করতে পারবে না। আর যদি কেউ প্রভাব খাটাতে চায়, সে যেই হোক, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
আচরণবিধির ব্যাপারে করা প্রশ্নের সিইসি বলেন, প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছে না, বিষয়টি এমন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। তবে আমি অনেককেই বলেছি আপনারা প্রস্তুতি নেন। যেদিন ভোটগ্রহণ হবে, সে দিন আপনাদের (প্রার্থীদের) সতর্ক থাকবে হবে। ভোটের আগে কী হলো সেটি মানুষ ভুলে যাবে। কিন্তু ভোটের দিন কারচুপি করে ফেললে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এ সময় প্রার্থীদের নানা অভিযোগ ও ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা শুনেন তিনি। প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ৩৮টি সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ কমকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন।