জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠির জবাব না দেওয়ায় জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে মারুফা আক্তারকে (পপি) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দের স্বাক্ষরিত অব্যাহতির চিঠিটি আজ সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
মির্জা আজম ও মারুফা আক্তার দুজনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। মির্জা আজম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ফারুফা আক্তার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্যপদে আছেন। পাশাপাশি মারুফা আক্তার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে ছিলেন।
অব্যাহতি দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনি (মারুফা) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী ছিলেন। ২০ নভেম্বর মো. আবুল কালাম আজাদকে মির্জা আজমের মাধ্যমে জামালপুর-৫ (সদর) আসনের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য পাঠান দলীয় প্রধান। সকাল ১০টায় স্থানীয় মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বেলা ৩টায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পৌর আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়। আপনি (মারুফা) সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা চলার একপর্যায়ে মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে মঞ্চের সামনে কর্মীদের সারিতে বসেন। বারবার মঞ্চে এসে বসার অনুরোধ করা হলেও কর্মীদের সারিতেই বসে থাকেন। পরে সকলের পীড়াপীড়িতে মঞ্চে এসে মির্জা আজমের পাশের চেয়ারে আসন গ্রহণ করেন।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য চলাকালে হঠাৎ আপনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে মতবিনিময়ের সুযোগ চাইতে থাকেন। আপনার (মারুফা) আকস্মিক এহেন আচরণে মঞ্চে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ হতবাক হয়ে যান। এ সময় মির্জা আজম আপনাকে (মারুফা) নিবৃত্ত করতে বারবার চেয়ারে বসতে বলেন, তদুপরি আপনি নিবৃত্ত না হলে একপর্যায়ে মির্জা আজম আপনাকে (মারুফা) ছোট বোন বিবেচনায় একটু উচ্চ স্বরে বসতে বলায় আপনি উচ্চ স্বরে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে একপর্যায়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অতীব দুঃখের বিষয় যে, আপনি (মারুফা) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মির্জা আজম ও তাঁর মরহুম পিতা এবং পরিবার নিয়ে অসত্য, কুরুচিপূর্ণ, অশালীন বক্তব্য ভাইরাল করেন, যার ফলে জামালপুর আওয়ামী লীগ পরিবারের প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জামালপুর জেলা শাখা সার্বিক বিষয় অনুধাবন করে, গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আপনার (মারুফা) এহেন আচরণ এবং অসত্য, অশালীন বক্তব্যের জন নিন্দা প্রস্তাবের পাশাপাশি আপনাকে (মারুফা) সাত কার্যদিবস সময় দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সঙ্গে আপনার (মারুফা) দাখিলকৃত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে আপনাকে (মারুফা) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জামালপুর জেলা শাখার সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
মারুফা আক্তার বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো চিঠি আমি পাইনি। তবে শুনেছি। অব্যাহতি মানে আমি যাতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে না পারি। কিন্তু আমি তো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তিনবারের সদস্য। অর্থাৎ আমি সারা বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারি। এতে দলীয় কার্যক্রমে আমার বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুতি ঘটবে না।’
ব্যাখ্যা চাওয়ার প্রসঙ্গে মারুফা আক্তার বলেন, ‘ফেসবুকে পোস্টের ব্যাপারে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ। আমিও সাত কার্যদিবসের মধ্যেই ব্যাখ্যা চাওয়ার চিঠির জবাব দিয়েছি। তারপরও ব্যাখ্যার জবাব না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এই বিষয়টি আমি জানি না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ বলেন, ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে মারুফা আক্তারের কাছে সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে কোনো জবাব পাঠাননি। এককথায়, তিনি জবাব দেয়নি। এতে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। ফলে তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।