নিবন্ধন শুরুর পর থেকে এবার (২০২৪) পবিত্র হজে যেতে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ দিনে মাত্র ৩ হাজার ৪৬৭টি আবেদন জমা পড়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় আজ রোববার শেষ হচ্ছে নিবন্ধনের সময়। তবে নিবন্ধনে সাড়া না মেলায় সময় ২১ দিন বাড়ানোর কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। আজই এ বিষয়ে জারি হতে পারে বিজ্ঞপ্তি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। কোটা অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২০২৪ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন (সরকারিভাবে ১০ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারিভাবে ১ লাখ ১৭ হাজার) হজে যেতে পারবেন। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানাতে হবে এবং ৮ জানুয়ারি দুই দেশের মধ্যে হজচুক্তি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্যবার চুক্তির পরে শুরু হয় নিবন্ধন কার্যক্রম। এবার সৌদি আরবই চুক্তির আগে নিবন্ধন শেষ করার শর্ত দিয়েছে। এ হিসাবে হাতে খুব বেশি সময় নেই। নিবন্ধনের বর্তমান ধারা চলতে থাকলে হজ কোটার বড় অংশই খালি থাকবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় ও অনুমোদিত এজেন্সির সংশ্লিষ্টরা। গতবার নিবন্ধনের সময় ৯ দফা বাড়ানোর পর নির্ধারিত কোটা থেকে ৪ হাজার ৩১৪টি খালি ছিল।
হজ এজেন্সি মালিকরা জানান, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ একটি অংশ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। বিপরীতে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে টানা হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। হজের খরচ এবার কিছুটা কমলেও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এটিও অনেকের সাধ্যের বাইরে। তা ছাড়া গতবার ফেব্রুয়ারি থেকে টানা এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। এবার ১৫ নভেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু হয়ে ২৫ দিন দেওয়া হয় এবং প্রচারণার অভাবে অনেকেই জানেন না। ফলে নিবন্ধনে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা ডেকে মতামত নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এবার এখন পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৭৬ ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ১৩৪ জন নিবন্ধন করেছেন। কোটা পূরণে আরও সোয়া লাখের মতো নিবন্ধন করাতে হবে, যা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। যদিও সৌদি সরকার নতুন নিয়মের ওপর দৃঢ় থাকলেও পুরো ডিসেম্বর নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। সে ক্ষেত্রে নিবন্ধনের সময় কয়েক দফা বাড়বে।
জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, ‘নিবন্ধন নিয়ে চিন্তা করছি না। যতজন হবে, ততজন যাবেন। নির্বাচনের কারণে মানুষ মনে করতে পারে, নিবন্ধনের সময় বাড়বে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। তবে ৮ জানুয়ারির পর আর বাড়ানোর সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘কতজন যাবেন, তা ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত করতে হবে। সৌদি আরব অনেক পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। মিনায় কেউ আগে বুকিং না দিলে তাঁর জায়গা পেছাতে থাকবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন না করলে ভালো প্যাকেজ দেওয়া সম্ভব হবে না। শুনেছি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এরই মধ্যে বিভিন্ন জোনে বুকিং নিয়েছে। হজযাত্রীর সংখ্যা না জানতে পারলে আমরা বুকিং করতে পারছি না।’
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার বলেন, ‘সামনে নির্বাচন থাকায় নিবন্ধন হচ্ছে খুব ধীরে। শেষ মুহূর্তে নিবন্ধন বেশি হয়, আশা করছি, সময় বাড়বে। তা না হলে তো কোটা পূরণ হবে না।’
চট্টগ্রামের আল কিবলা হজ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ চলছে, মানুষ নিবন্ধনে সাড়া দিচ্ছেন না।’ ঢাকার কলাম্বিয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটের বছর মানুষ ব্যস্ত থাকে। আবার অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশি ভালো না। সব মিলিয়ে নিবন্ধনের হার কম। তবে নিবন্ধনের জন্য এখন একটি সিরিয়াল ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। নতুন নিবন্ধন না এলে প্রাক-নিবন্ধিতদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
সরকারিভাবে আগামী বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ ও বিশেষ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ ও বিশেষ প্যাকেজে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। উভয় ব্যবস্থাপনায় কোরবানির খরচ আলাদা করে নিতে হবে।