ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে পাঁচ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ (ধনু)। এ সময় তার বেড়েছে ব্যবসায়িক আয়, ব্যাংকে জমাকৃত টাকা। এ ছাড়া কিনেছেন জমি-বিলাসবহুল গাড়ি।
২০১৮ সালে এমপি ধনুর কাছে নগদ ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা থাকলেও তা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৩ টাকা। এ ছাড়া এক কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নির্বাচন করলেও এমপি হয়ে সেটি কমিয়ে এনেছেন মাত্র ৪ লাখে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিনের হলফনামা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কাজিম উদ্দিন ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথম বার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এবার আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের বার্ষিক আয় ছিল ১৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাতে ১ লাখ ৪৭ হাজার, বাড়ি ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৩৫ হাজার, ব্যবসা থেকে ১১ লাখ আয় দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ছয় গুণ বেড়ে হয়েছে ৮৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা। যার মধ্যে মৎস্য খাত থেকেই আয় সাড়ে ৭২ লাখ টাকা এবং সাপ্লাই ৫ লাখ ৪০ হাজার। এ ছাড়া কৃষিখাতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৮ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে আয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৯ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী পান ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এদিকে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫২ গুণ। পাঁচ বছর আগের হলফনামায় নগদ ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা দেখালেও এবার দেখিয়েছেন ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৩ টাকা। এ ছাড়াি নির্বাচনের আগে ব্যাংক জমা ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা দেখিয়েছিলেন, এবার সেটির পরিমাণ ১৩ লাখ ১০ হাজার ৭৯ টাকা।
এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি প্রাইভেটকারে চড়তেন কাজিম উদ্দিন। এমপি হয়েই কিনেছেন আরও একটি জিপ গাড়ি, যার মূল্য ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ৮০৬ টাকা। এছাড়াও ১১ গুণ বেড়েছে সোনার পরিমাণও। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজের কাছে ১০ তোলা (ভরি) স্বর্ণ থাকলেও গত পাঁচ বছরে যোগ হয়েছে আরও ১০০ তোলা (ভরি) সোনা। যা জন্মদিন, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন এমপি।
পাঁচ বছরে বেড়েছে জমিসহ স্থাবর সম্পত্তিও। ২০১৮ সালের হলফনামায় জমির পরিমাণ দেখিয়েছিলেন, পৈত্রিক সূত্রে ও ক্রয়কৃত ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৯ দশমিক শূন্য ৩ একর কৃষিজমি, ৫০ হাজার টাকার ১ দশমিক ২ শূন্য একর অকৃষি জমি এবং দেড় লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার স্কয়ার ফিট ২ তলা দালান। বর্তমানে কৃষিজমি বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৫৫ একর (৩৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা) এবং পৈত্রিক সূত্রে অকৃষি জমি বেড়ে ১২ দশমিক ২০ একর (২ লাখ টাকা) এবং ৩ তলা বাড়ি ও মাটির ঘর (দুই লাখ টাকা)।
এ ছাড়া পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া লাইসেন্সকৃত দশমিক ২২ বোর রাইফেলের সঙ্গে তিনি এবার কিনেছেন দশমিক ৩২ বোরের এন.বি.পি পিস্তল। তবে ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে ঋণের বোঝা কমিয়েছেন সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমানে শুধু শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে ঋণ রয়েছে ৪ লাখ ৯৭৭ টাকা।
এদিকে স্ত্রীর সম্পদের ব্যাপারে হলফনামায় কোনো কিছুই উল্লেখ করেননি সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু।