ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে টানা দুই মেয়াদের এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের ১০ বছরে আয় বেড়েছে ১২৭ গুণ। জমি-বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও ব্যবসার প্রসারের পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় বেড়েছে এমপির স্ত্রীরও। বাবেলের নিজের রয়েছে ২২০ ভরি স্বর্ণ। স্ত্রীর হয়েছে আরও ৫০০ ভরি সোনা। এমপি হয়ে বাবেল কিনেছেন গাড়ি এবং নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি করে অস্ত্র। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০০৯ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে এমপি হন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, সে সময় হলফনামায় নিজেকে ব্যবসায়ী দেখালেও কি ধরণের ব্যবসা করেন তা উল্লেখ ছিল না। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক কোনো আয়ের তথ্য ছিল না। ছিল না কৃষি, বাড়ি-দোকান ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো আয়। চাকরি হিসেবে ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ছিল ৬০ হাজার টাকার। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেখানো হয়েছিল। যৌথ মালিকায় ১৫ একর সাড়ে ১৭ শতাংশ অকৃষি জমিও দেখানো হয় হলফনামায়। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার তথ্য দেওয়া হয়েছিল। মামলাগুলোর দুটিতে খালাস, দুটিতে অব্যাহতি ও একটি অভিযোগপত্র থেকেই অব্যাহতিপ্রাপ্ত। স্ত্রীর নামে কোনো ধরণের সম্পদ ছিল না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ বছর এমপি থাকার পর বাড়তে শুরু করে আয় ও সম্পদ। কৃষি খাতে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, বাড়ি-দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫০ টাকা, একই খাতে স্ত্রীর আয় ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭০০ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ২ কোটি ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা, একই খাতে স্ত্রীর আয় ৭ লাখ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। নগদ টাকা ১ হাজার ৭৯৩ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ৪ কোটি ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১২৪ টাকা। স্ত্রীর ব্যাংকে আছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৯৬ টাকা। আগে কোনো গাড়ি না থাকলেও এমপি হওয়ার পর কিনেছেন দুটি জিপ ও একটি মোটরসাইকেল। প্রথম এমপি হওয়ার সময় দেওয়া হলফ নামায় ৬০ হাজার টাকা স্বর্ণ দেখানো হলেও একাদশ নির্বাচনের হলফনামায় দেখানো হয় বিয়ের সময় উপহার হিসেবে পাওয়া ২২০ ভরি স্বর্ণ। যার মূল্য ‘জানা নেই’ উল্লেখ করা হয়। নিজের ২২০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ৮০ হাজার ও আসবাবপত্র ৮০ হাজার টাকা। এমপি হয়ে নিজের নামে কিনেন একটি পিস্তল ও একটি সর্টগান। একইসঙ্গে স্ত্রীর নামে কিনেন একটি পিস্তল ও একটি রাইফেল।
এমপি হওয়ার আগে কৃষি জমি না থাকলেও ১০ একর কৃষি জমি ও ৩০ একর ফিসারী দেখানো হয়। যা পৈত্রিক সূত্রে পান বলে উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। বেড়েছে অকৃষি জমিও। ময়মনসিংহ ও গফরগাঁওয়ে ১৫ একর জমি, নারায়নগঞ্জে ১১ শতক জমি, ঢাকার নিকুঞ্জে সাড়ে ৩ শতক জমি পেয়েছেন পৈত্রিক সূত্রে। ময়মনসিংহের ভালুকায় নিজ নামে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে ২ একর ২৭ শতক জমি কিনেছেন। স্ত্রীর নামে দোতলা একটি বাড়ি হয়েছে। সেই বাড়িটি পৈত্রিক সূত্রে স্ত্রী পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৮টি ফ্ল্যাটও দেখানো হয় স্ত্রীর নামে। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে গাড়ির জন্য ঋণ ছিল ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৭ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংদ নির্বাচনেও বাবেল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, কৃষি খাতে আয় কমে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নেমেছে। বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা। একই খাতে স্ত্রীর দেখানো হয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ৭০০ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬৩৬ টাকা। স্ত্রীর ব্যবসা থেকে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাৎসরিক আয়। এমপি হিসেবে সম্মানি ও বিভিন্ন ভাতা বাবদ আয় ২৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ টাকা। ব্যাংক মুনাফা ১৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৩ টাকা এবং স্ত্রীর ৬১ হাজার ৫৮৩ টাকা।
এমপি বাবেলের হাতে নগদ টাকা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার ১২২ টাকা। স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ১১ কোটি ৯২ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৯ টাকা এবং স্ত্রীর ব্যাংকে আছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৫ টাকা। ১ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যে দুটি জিপ গাড়ি দেখানো হয়েছে বাবেলের নামে। একাদশ নির্বাচনে হলফ নামায় নিজের নামে ২২০ ভরি স্বর্ণ দেখানো হলেও স্ত্রীর নামে কোনো স্বর্ণ ছিল না। কিন্তু এবারের হলফ নামায় স্ত্রীর নামে ৫০০ ভরি স্বর্ণ দেখানো হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী নিজের নামে ৮০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ৩ লাখ টাকা, নিজের নামে আসবাবপত্র ৮০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। বাবেলের নামে পিস্তল ও শর্টগানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে থাকা পিস্তল ও রাইফেলের মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা।