এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ২৯৮টি আসনের মধ্যে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ২৪। যাদের মধ্যে দুই নারী প্রথমবারের মতো নৌকার কাণ্ডারি হয়েছে। তাদের একজন নিলুফার আনজুম পপি। যিনি ময়মনসিংহের ১১ টি আসনের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী। নিলুফার আনজুম ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী।
পপিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া মেনে নিতে পারছেন না বঞ্চিতরা। এ আসনে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদসহ আওয়ামী লীগের ৯ নেতা। তাদের মধ্যে সাতজন একজোট হয়েছেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি।
মনোনয়নবঞ্চিতরা নৌকার প্রার্থী নিলুফার আনজুম পপিকে বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে অভিযোগ করে প্রার্থী বদলের দাবি তোলেছেন। এ নিয়ে একাধিক সভা করে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। তবে পপি তাদের অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বঞ্চিতদের এমন কর্মকাÐকে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধচারণ বলে মন্তব্য করেছেন।
শনিবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে নৌকার প্রার্থী বদলের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী হওয়ায় নিলুফার আনজুম পপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু উনার (পপি) ও তার পরিবারের কারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। পপির বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৯২ সালে গৌরীপুর সরকারি কলেজে ছাত্রদলের প্যানেলে ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার পরিবারের একাধিক সদস্য বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী নিলুফার আনজুম পপি বলেন, তারা যে অভিযোগগুলো তুলেছে এগুলো মিথ্যা এবং ভুয়া। তারা আমাকে যে কলেজের ছাত্রদলের নেত্রী হিসেবে অভিযোগ তুলেছে আমি সেই কলেজে কখনো পড়াশোনাই করিনি। আমার নাকি গৌরীপুর আ.লীগের সদস্য পদই নাই অথচ আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমি যদি সদস্যই না থাকতাম তাহলে আমি সভাপতি হলাম কিভাবে। সুতরাং এ নিয়ে তো আর কোনো আলোচনাই চলে না। বাকি যা আছে সবই মিথ্যা। আমি নারী বলে আমাকে না মানতে পেরে এমনটি করছে কীনা সেটিও বুঝতে পারছি না।
পপি বলেন, এতদিন তারা নিজেরাই সভা-সমাবেশে বললেন প্রার্থী যে-ই হোক আমরা তার সঙ্গে আছি। তা কি না বুঝেই বলেছেন? পেলে অনুগত, না পেলে স্বতন্ত্র, এমনটা হয়ে গেল না? এটা শুধু যে এবারই তা কিন্তু নয়। এ আসনে প্রতি নির্বাচনেই মনোনয়নবঞ্চিতরা এমনটা করে থাকেন। আগের নির্বাচনেও নাজিম উদ্দিন আহমেদ যখন মনোনয়ন পেয়েছেন তখনও তার বিরুদ্ধে ঝাড়–-জুতা মিছিল করেছে। এবার যারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন তখন উনারাই নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন। এমনটাই এখানে হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমার দাদা একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা ছিলেন গৌরীপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি ছিলেন উপজেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। এগুলো পরিচয় কোথায় গেলো? তাছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী অর্জন প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী। গত ২৩ টি বছর ধরে আওয়ামী লীগের ভাতে-কাপড়ে আমি। আমার শ্বশুর সাবেক জেলা আ.লীগের সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য।
পপি বলেন, উনারা দীর্ঘদিন ধরে দল করছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজকে এখানে এসেছেন। দলও তাদেরকে অনেক দিয়েছে। কিন্তু তারা হয়তো তা দেখতে পারছেন না। দলের পরিচয়-সম্মান সবাই পাচ্ছি। এখন হয়তো বিরোধীতার জন্যই এমনটা করছেন। দল আমাকে ভালোবেসে নৌকা দিয়েছে আর জনগন ভালোবাসে দলকে। তারা আমাকেও ভালোবাসে। আমি গত এক বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমাকে নৌকা দেওয়া এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। দল আমাকে মনোনীত করেছে।