দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসেছে আওয়ামী লীগসহ ১৩টি দল।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই বৈঠক শুরু হয়। আওয়ামী লীগসহ ২২টি দলকে সকালে আলোচনার আমন্ত্রণ জানালেও উপস্থিত হয়নি নয়টি দল।
ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই আলোচনায় উপস্থিত দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা দলের দুজন মনোনীত প্রতিনিধি রয়েছেন।
সকালে ও বিকালে দুই ভাগে ২২টি করে মোট ৪৪টি দলকে শনিবার আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি।
সকালে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল- আওয়ামী লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, তৃনমূল বিএনপি, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিজেপি, সিপিবি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, এনপিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, খেলাফত মজলিশ, বিএমএল, বিএনএফ, গণফ্রন্ট ও ইনসানিয়তা বিপ্লব বাংলাদেশকে।
এর মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত হয়নি- বিএনপির সমমনা এলডিপি, বিজেপি, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সিপিবি, গণতন্ত্রী পার্টি, বিএমএল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিশ।
অপরদিকে বিকাল সাড়ে ৩ টায় ডাকা হয়েছে- বিএনপি, জেপি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, জেএসডি, জাকের পার্টি, বাসদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মুক্তিফৌজ, বাংলাদেশ জাসদ ও বিএনএম-কে।
ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছিলেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ ৪৪টি দলকে তারা এই আলোচনার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
ভোট নিয়ে বিবদমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সহিংসতাও শুরু হয়েছে। মতভেদ নিরসনে সংলাপের তাগিদ এসেছে দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে; কূটনৈতিক মহলেও চলছে দৌড়ঝাপ। তবে এখন পযন্ত বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আঁচ মিলছে না।
বিএনপি মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আগের মত ইসির আমন্ত্রণে বিএনপি ও সমমনাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় অফিস বন্ধ থাকায় এবার ইসির চিঠিও নিতে পারেনি দলটি।
২৮ অক্টোবরের সংঘাতের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইসির সংলাপকে ‘উপহাস ও তামাশা’ বলে অভিহিত করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, “ঢাকায় তারা (বিএনপি) যে রক্তপাত, তাণ্ডব ঘটিয়েছে…এরপর এই সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সংস্থা, তারা সংলাপ করলে এটা তাদের বিষয়।”
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দু’দফা সংলাপে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। সে কারণে বিএনপি ও সমমনা দল এবং সিপিবি, বাসদসহ সংলাপ বর্জন করা ৯ দলকে গত মার্চে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাতেও সাড়া দেয়নি দলগুলো।
এখন চলছে ভোটের প্রস্তুতি। কিন্তু ভোট পদ্ধতি নিয়ে বিরোধের মধ্যে হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচিতে রয়েছে বিএনপি। রাজনীতির উত্তাপ ইতোমধ্যে গড়িয়েছে সহিংসতায়। বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিএনপির অফিসও তালাবন্ধ শনিবারের পর থেকে।
এ পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ সমমনারা ইসির ডাকে সাড়া দেবে কিনা জানতে চাইলে এর আগে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে এই পরিস্থিতিতেই ভোটের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য দলগুলোকে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের মূল অংশীজন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পূর্ব প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে ৪ নভেম্বর এক আলোচনা সভার অয়োজন করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন এবং নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন।