দুপুরেই বাবা ফোন করে মাকে বলেছিলেন, ‘তানহাকে ভাত খাওয়াও’। তার কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যায়ই বদলে গেছে তানহার জীবন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মায়ের কোলে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তানহা বলছে, ‘বাবার কাছে যাব, বাবার কাছে যাব।’ কিন্তু বাবার কাছে আর যাওয়া হবে না সাড়ে সাত বছরের তানহার।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) পল্টনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন তানহার বাবা পুলিশ কনস্টেবল আতিউর রহমান পারভেজ (৩২)।
শনিবার সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে সাত বছরের তানহা মায়ের পাশে বসে কাঁদছে।
তানহার মা রুমা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কল্পনাও করতে পারিনি সে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে। যে কখনও একটা মশা মারতে পারত না, তাকে কীভাবে মারল? আমাকে একলা রেখে কীভাবে চলে গেল? সবসময় বলত তোমাদের না দেখে থাকতে পারি না, ডিউটি শেষ হলেই তোমাদের কাছে ছুটে আসি। তোমাদের ছাড়া কোথাও যাব না। এখন আমাদের ছাড়া একলা কীভাবে থাকবে?’
স্বামীর সঙ্গে কখন কথা হয়েছে, জানতে চাইলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে রুমা বলেন, ‘আজ সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে ফোনে কথা হয়েছে। কোথায় আছে জানতে চাইলে বলল, পল্টনে আছি, এখন পরিবেশ ভালো। বলল, তানহাকে দেখে রাখো, ওকে ভাত খাওয়াও। এরপর সন্ধ্যা থেকে আর ফোনে পাইনি ওকে।’
পুলিশ কনস্টেবল পারভেজের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুরুল আলি মোল্লা।
একমাত্র মেয়ে তানহা ও স্ত্রী রুমাকে নিয়ে পারভেজ ঢাকার শাহাজাদপুরে থাকতেন। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে কর্মরত ছিলেন তিনি।
আজ রাজধানীর ফকিরাপুল চার রাস্তার মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক নিহত হন পারভেজ। শনিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পারভেজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পারভেজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রায়হান রাবদি নামে এক যুবক বলেন, ‘ফকিরাপুল মোড়ে পুলিশের ওপর যখন হামলা হয়, তখন ওই পুলিশ সদস্যসহ চারজন পুলিশের সঙ্গে একটি ভবনে ঢুকে পড়ি আমি। সেখান থেকে হঠাৎ ওই পুলিশ কনস্টেবল বাইরে বেরিয়ে যান। তখনই তার ওপর হামলা চালায় একদল লোক। তারা তার মাথায় আঘাত করে। সেখান থেকে অন্য পুলিশের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’