আইনের খসড়ায় আনসার ব্যাটালিয়নকে অপরাধী আটক ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
আনসার ব্যাটালিয়নের সামনে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে ‘আটকের’ বদলে ‘ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা’ নেওয়ার বিধান যুক্ত করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। এর ফলে প্রস্তাবিত আনসার ব্যাটালিয়ন আইনে সরাসরি আটক ও তল্লাশির ক্ষমতা আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যদের আর থাকছে না।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। বিলটি নিয়ে সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে সংসদের বৈঠকে তোলার কথা রয়েছে। সাধারণত বিলে সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করে, তা শেষ পর্যন্ত রাখা হয়।
এর আগে গত সোমবার ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩’ সংসদে তুলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিলে আনসার ব্যাটালিয়নকে আটক, তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। এটি নিয়ে সংসদে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।
আনসার ব্যাটালিয়নকে এমন ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। পুলিশ বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আনসার বাহিনীকে আটকের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। সংসদে বিল তোলার সময়ও মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রস্তাবিত বিলে কোনো সাংঘর্ষিক বিধান থাকলে তা সংসদীয় কমিটিতে সংশোধন করা যাবে।
গত সোমবার সংসদে বিল তোলার পর তা পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আজ বিলটি নিয়ে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আনসার ব্যাটালিয়ন বিলের ৭ ও ৮ ধারাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু সংশোধনী আনার সুপারিশ করা হয়।
সংসদে উত্থাপিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছিল, ‘…কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি; কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।’
বিলের এই ধারায় সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটি সূত্র জানায়, এই ধারায় সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ‘…কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
কমিটি সূত্র জানায়, এই প্রস্তাব এসেছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সভাপতি বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিলের ৮ ধারা বাদ হবে না। সেখানে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিলে আরও কিছু সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদে উত্থাপিত বিলের ৭ ধারায় আনসার ব্যাটালিয়নের দায়িত্বের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, জননিরাপত্তামূলক কোনো কাজে সরকার বা সরকারের অনুমোদনক্রমে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদন করবে। এখানে সংশোধনী এনে ‘দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলে আনসার বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড উল্লেখ করা হয়েছিল। সংসদীয় কমিটি এ ক্ষেত্রে ‘মৃত্যুদণ্ড’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, সামিল উদ্দিন আহমেদ ও রুমানা আলী।