র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতারের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাদের সামনে তুলেছিলাম। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের যে প্রচেষ্টা সেটি অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্টে আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব নিষেধাজ্ঞাগুলো, বিশেষ করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক যে নিষেধাজ্ঞা আছে সেগুলো আগে তুলে নেওয়া। কারণ বড় আকারে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক যে নিষেধাজ্ঞা সেগুলো সময় লাগবে। এখন কেস বাই কেস তুলে নিলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়বে। সংঘাতমুক্ত যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে সেখানেও হয়তো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের যে আইনি প্রক্রিয়া আছে, সেটা অনুসরণ করেই আমরা এগোচ্ছি। তারা যদি বলে প্রতিষ্ঠানের জন্য তাদের এ সংস্কারগুলো দরকার, সেটা সময় লাগবে, দেরি হবে। যে কারণে আমরা বলছি, যেটা আগে হয়, যদি মনে করা হয় ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সেটা সহজ হবে, হয়তো ইনস্টিটিউশন পরে লাগবে। অর্থাৎ যেটা আগে আসে, সেটা করা হবে।
র্যাবের কোনো সংস্কার করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। এটা র্যাবও জিজ্ঞাসা করতে পারে। আমাদের যেটা জানা আছে, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তারাও জানেন। যে কোনো সংস্থায় একটা অব্যাহত সংস্কার হতে থাকে।
নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা বা বিনিয়োগকেন্দ্রিক কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না জানিয়ে সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়েও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সম্প্রতি এনডিআই ও আইআরআই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। তারা পরামর্শ দিয়েছিল সে ব্যাপারে মার্কিন অবস্থানও একই রকম বলে তিনি জানিয়েছেন। তারা চাচ্ছে যে আগামী নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হোক। সেটা যাতে সংঘাতমুক্ত হয় এ ব্যাপারে তাদের যে অবস্থান আছে সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমরা বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে এনডিআই ও আইআরআই প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছেন। সেখানে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সরকারের যে কমিটমেন্ট আছে নির্বাচন করার সেটাও বলেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে ইতিহাসের পটভূমি আছে বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থান তাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। এ ব্যাপারে আমাদের নতুন কিছু বলার ছিল না। আমরা বলেছি, এনডিআই ও আইআরআই যদি তাদের পর্যবেক্ষক পাঠায় তাহলে নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যতটুকু করা দরকার সেটা করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। সম্প্রতি নিউইয়র্কে সাইট লাইনে যে বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল রোহিঙ্গা হিউমেরিটিয়ান অ্যাকশন।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের আপডেট জানিয়েছি। রোহিঙ্গা সংকট সমস্যা সমাধানে মূল বিষয় হচ্ছে তাদের নিজেদের দেশে ফেরানো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে এ ব্যাপারে তাদের কিছু কনসার্ন আছে। আগেও তারা বলেছে, এটা সেভ অ্যান্ড সিকিউট হতে হবে, একটি স্থায়ী হতে হবে, নইলে বারে বারে এটি হয়। এক্ষেত্রে তারা অতীতের উদাহরণও দিয়েছেন। রাখাইনে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটিও ধারণার মধ্যে রাখতে হবে।।
‘আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি যে আমরা আমাদের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরাও এমন কোনো পদক্ষেপ নেবো না যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কোনো কিছু আমরা করবো না। মিয়ানমার এবং চাইনিজদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যক্ত রাখবো আগামী দিনগুলোতে। যাতে আমরা শিগগির এটা শুরু করতে পারি। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আমরা স্পষ্ট করেছি তাদের কাছে।’