ময়মনসিংহের ত্রিশালে গার্মেন্টকর্মীদের বহনকারী রাসেল স্পিনিং মিলের বাসটি সড়কের চলাচলের অনুমতি হারিয়েছে চার বছর আগে। তবুও ফিটনিসবিহীন বাসটি সড়কে নিয়মিত দিব্যি চলাচল করছিল। যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে এ বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় ছয়জন। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর উদাসীনতাকে দায়ী করছেন।
রাব্বি-সেতু নামে ঢাকা মেট্রো-জ-১৪-১০০৪ নামের রাসেল স্পিনিং মিলের বাসটি প্রতিদিন গার্মেন্টকর্মীদের বহন করতো। পাশাপাশি সুযোগে ভাড়ায় যাত্রীও বহন করতো বাসটি। বাসটির মালিক টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মুসিন্দা গ্রামের মো. আবু হানিফ শিকদার। বাসটি সড়কে চলাচলের অনুমতি হারিয়েছে ২০১৯ সালের ১ জুন। ফিটনেস হারিয়েছে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।
ফিটনেস বিহীন গাড়িটির মালিকানা এখনও আবু হানিফ শিকদারের নামে। তিনি জানান, অন্তত চার বছর আগে বাসটি ঢাকার একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফিনটেনস না থাকয় বিক্রি করা হয়েছিল। বাসটির চাপায় ৬ জনের মৃত্যুতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিআরটিএ ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) এ.এস.এম ওয়াজেদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা বিষয়টি নিয়ে ঘটনাস্থলে কাজ করছি। দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত হতে কাজ চলছে। গাড়ির রোড পার্মিট বা অন্যান্য কাগজপত্র ছিলো কি না যাচাই করা হয়নি। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তবুও সড়কে চললে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাস্টিবোর্ড থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শেরপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এস এস ট্রাভেলস নামের একটি বাসে ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই ও ত্রিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে গার্মেন্টসকর্মীরা ওঠেন। চেলেরঘাট এলাকায় যেতে বাসটির চাকা প্যাংচার হয়। এসময় বাসটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে মেরামত করছিল। এতে গার্মেন্টসকর্মীরা নেমে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। এরই মধ্যে তারা ইসলাম পরিবহনের আরেকটি বাসকে সিগন্যাল দিয়ে দাঁড় করান। এ সময় রাসেল স্পিনিং মিলের একটি বাস ওই যাত্রীদের উঠানোর জন্য দুই বাসের মাঝখানে ঢুকিয়ে দেয়। তবে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের চাপা দেয় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন এবং ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ মেডিকেলে দুইজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে আরও পাঁচজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক।
নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই এলাকার খায়রুজ্জামান লিটন (২৮), বাড়েরারপাড় ভাটিপাড়া এলাকার শিমুল আহমেদ জয় (২০), ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের হদ্দের ভিটা গ্রামের মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী এলাকার জেসমিন আক্তার (২১), সাখুয়া ইউনিয়নের গন্ডখোলা এলাকার বখতিয়ার হোসাইন সোহেল (৩৫), ঈশ্বরগঞ্জের মারোয়াখালি এলাকার আলতাব হোসেন (৬০) এবং অন্য এক নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে আলতাব হোসেন গাজীপুরে কসাইয়ের কাজ করেন এবং বাকিরা ভালুকায় বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন জানান, ঘাতক ও দুর্ঘটনা কবলিত বাস দুটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে তৎপরতা চলছে। মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।