৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে শেরপুরের নকলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার আয়োজনে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘কাঙ্খিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে র্যালি শেষে মাদ্রাসা মিলনায়তনে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সহকারী শিক্ষক শওকত আলীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- সহসুপার মাওলানা মো. ফজলুল করিম, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন, সহকারী শিক্ষক নুসরাত জাহান নিপা, সম্প্রতি যোগদানকৃত সহকারী মৌলভী হযরত আলী ও বেতমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগারিক) মো. আকাশ আহমেদ বাদল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন- শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করে নতুন প্রজন্মদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করেন। সেইসব নিঃস্বার্থভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া শিক্ষকদের সম্মানে ৫ অক্টোবর দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় শিক্ষক দিবস হিসেবে। তারা জানান, ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো’র মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যদিয়ে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের শুভ সূচনা হয়। যদিও বিশ্বের অনেক দেশে বছরের অন্যান্য অনেকদিনে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর শতাািধক দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এটি দেশ বিদেশে শিক্ষকদের জন্য সম্মানের ও স্মরণীয় দিবস। তাছাড়া পরবর্তী প্রজন্ম যেন শিক্ষকদের সম্মানে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে এটাও একটি অন্যতম লক্ষ্য বলে তারা জানান।
তারা আরো বলেন- বিশ্বব্যাপি শিক্ষকগনের সুনাম বৃদ্ধি ও সকল জাতির সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সবদেশের সরকারকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান তারা। বিশেষকরে বাংলাদেশের সকল শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে সুনজরের সহিত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবীসমূহ পূরণের ক্ষেত্রে অধিক আন্তরিক হওয়ার দাবী জানান বক্তারা। ’শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, আর শিক্ষকগণ হলেন এই মেরুদন্ডকে ঠিক করার ও ঠিক রাখার একমাত্র কারিগর। অতএব শিক্ষকদের প্রতি সুনজর দেওয়া এখই উপযুক্ত সময় বলে তারা মনে করেন।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রের বরাদদিয়ে তারা আরো জানান, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ই.আই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের তথ্য-সূত্র মোতাবেক বক্তারা বলেন, বিশ্ব শিক্ষক দিবসকে সব দেশে স্বীকৃতি প্রদান এবং উদযাপিত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের অধিকার, করণীয় ও মর্যাদা সুরক্ষায় ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১৪৫টি সুপারিশ গৃহীত হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে শিক্ষকদের মৌলিক ও অব্যাহত প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, দায়িত্ব ও অধিকার, শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা অন্যতম।
পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) উপর্যুক্ত সুপারিশসমূহ অনুমোদন করে। ১৯৯৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম অনুষ্ঠানে ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথমবার দিবসটি পালন করা হয়। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষকরা বড় পরিষরে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন শুরু করেন।
তবে শুধু একটি দিনের জন্য নয় প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জীবনে শিক্ষকের মর্যাদা এবং অবদানের কথা স্মরণ রাখতে হবে। শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায় বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
এসময় সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান খান, জামাল উদ্দিন, সহকারী মৌলভী ফুলেছা খাতুন ও তাহেরা সুলতানা, সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার, কব্দুল হোসেন, ইয়াছিন আহাম্মেদ, আরিফ হোসেন, লাবনী বেগম ও উজ্জল মিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।