প্রথম লাগেজ ভ্যান নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা ছেড়েছে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (৭১৮)। ট্রেনের নন-রেফ্রিজারেটর লাগেজ ভ্যানে ৪ হাজার ৬০০ কেজি মালামাল বুকিং নেওয়া হয়। যাত্রীবাহী ট্রেনে এই মাল পরিবহন বাবদ রেলওয়ে আয় করেছে ১০ হাজার ২১২ টাকা। এই পথে কেজিপ্রতি পরিবহন খরচ ২ টাকা ২২ পয়সা।
আজ রোববার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ফিতা কেটে লাগেজ ভ্যান উদ্বোধন করেন এবং সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন ছাড়ার অনুমতি দেন।
উদ্বোধনের আগে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে সবুজ শাকসবজি, মৌসুমি ফল, ফুল, অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য (মাছ, মাংস, দুধ), ওষুধ ও ভ্যাকসিন রেলযোগে পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে লাগেজ ভ্যান ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার লক্ষ্যে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১২৫টি লাগেজ ভ্যানসহ (৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ) অন্যান্য রোলিং স্টক (৪০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগন ও ৪২০টি ব্রডগেজ ওয়াগন) সংগ্রহের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২০১৮ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়।
‘পরে ওই বছরের জুলাইয়ে ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান সংগ্রহের জন্য দুটি দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ও চীনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান JV of CNTIC-RAILTECO-JINXI-এর সঙ্গে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট পৃথক দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মোট চুক্তিমূল্য ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (৭৫টি মিটারগেজ লাগেজ ভ্যানের চুক্তিমূল্য ১৮৩ কোটি ২৪ লাখ এবং ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যানের চুক্তিমূল্য ১৭৫ কোটি ১৫ লাখ)।’
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহের (যেখানে প্রচুর শাকসবজি, মৌসুমি ফল, ফুল এবং অন্যান্য পচনশীল দ্রব্যাদি যেমন মাছ, মাংস, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি উৎপাদিত হয়) সঙ্গে নির্ধারিত আন্তনগর ট্রেনের মাধ্যমে লাগেজ ভ্যান যুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্যাদি সহজে বাজারজাত করতে পারবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা দেশের শহরগুলোতে কৃষিজাত পণ্যসমূহ সহজে সরবরাহ করতে পারবেন। ফলে দ্রব্যাদি সহজলভ্য হবে এবং ন্যায্যমূল্যে পাওয়া যাবে। এই ট্রেন চালু হলে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়বে, যা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
এই কৃষিপণ্য পরিবহনের বিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি। আমরা আড়তদার ও বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু আমরা এটা মাত্র শুরু করলাম, তাই ভবিষ্যতে এটাকে বহুমুখী করার জন্য অন্যান্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। আমরা এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা রেল নিয়ে কোনো ব্যবসা করতে চাই না। ফেসিলিটিসটা দিতে চাই। আমরা আপাতত ১৬টি ট্রেনে একটি করে লাগেজ ভ্যান দিচ্ছি। চাহিদার ওপর নির্ভর করে আমরা লাগেজ ভ্যান বাড়াব।’
লাগেজ ভ্যান সুবিধা পাওয়া যেসব ট্রেন ও যেসব স্টেশন থেকে—
১ /ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের পারাবত এক্সপ্রেসে (৭০৯ / ৭১০) শুধু চট্টগ্রাম ও সিলেট স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
২ /সিলেট-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেসে (৭২০ / ৭২৩) শুধু চট্টগ্রাম ও সিলেট স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৩ /চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেসে (৭১৯ / ৭২৪) শুধু চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও সিলেট স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৪ /চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটের বিজয় এক্সপ্রেসে (৭৮৫ / ৭৮৬) শুধু চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, গৌ. ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব বাজার স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৫ /ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে (৭৪৩ / ৭৪৪) শুধু ঢাকা, মেলান্দহ বাজার, ইসলামপুর বাজার, দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৬ /ঢাকা-ভূয়াপুর-ঢাকা রুটের জামালপুর এক্সপ্রেসে (৭৯৯ / ৮০০) শুধু ঢাকা, তারাকান্দি, সরিষাবাড়ী, জামালপুর স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৭ /ঢাকা-কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে (৭৮১ / ৭৮২) শুধু ঢাকা, নরসিংদী, ভৈরব বাজার, কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৮ /ঢাকা-মোহনগঞ্জ-ঢাকা রুটের হাওর এক্সপ্রেসে (৭৭৭ / ৭৭৮) শুধু ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
৯ /চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মহানগর এক্সপ্রেসে (৭২১ / ৭২২) শুধু চট্টগ্রাম, লাকসাম, কুমিল্লা ও ঢাকা স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
১০ /চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের চট্টলা এক্সপ্রেসে (৮০১ / ৮০২) শুধু চট্টগ্রাম, ফেনী, লাকসাম, ভৈরব বাজার, নরসিংদী ও ঢাকা স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
১১ /ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের জয়ন্তিকা ও উপবন এক্সপ্রেসে (৭১৭ / ৭৪০) শুধু ঢাকা, শায়েস্তাগঞ্জ ও সিলেট স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
১২ /সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটের জয়ন্তিকা ও উপবন এক্সপ্রেসে (৭১৮ / ৭৩৯) শুধু সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও ঢাকা স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
১৩ /ঢাকা-লালমনিরহাট-ঢাকা রুটের লালমনি এক্সপ্রেসে (৭৫১ / ৭৫২) শুধু ঢাকা, সান্তাহার, বগুড়া, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
১৪ /ঢাকা-রংপুর-ঢাকা রুটের রংপুর এক্সপ্রেসে (৭৭১ / ৭৭২) শুধু ঢাকা, সান্তাহার, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।
১৫ /ঢাকা-কুড়িগ্রাম-ঢাকা রুটের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে (৭৯৭ / ৭৯৮) শুধু ঢাকা, সান্তাহার, পার্বতীপুর, রংপুর ও কুড়িগ্রাম স্টেশন থেকে মালামাল লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে।