ময়মনসিংহের ত্রিশালে জন্মগ্রহণ করা আবুল মনসুর আহমদ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। জীবনের নানা অধ্যায়ে তিনি উত্তীর্ণ এক উজ্জ্বল মুখ। ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ ২০৬৩তম আসর আয়োজন করা হয় আবুল মনসুর আহমদ নিয়ে। ঘনবর্ষার রেশ তখনও কাটেনি ব্রহ্মপুত্রপাড়ের সবুজ আঙিনায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাতম নামেনি। নেমেছিলো কথার উচ্ছ্বসিত ধারা।
আলোচক ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবি সৈয়দ রায়হান উদ্দিন, আবুল মনসুর মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, যযুনা টেলিভিশনের ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান হোসাইন শাহীদ, আবুল মনসুর মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও গভর্নিং বডির সদস্য, রাজনৈতিককর্মী শাহ আলমগীর জয়, আইনজীবী ও কবি মাহবুব আলম মামুন। সভাপতিত্ব করেন হাজী ওসমান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, সামাজিক নেতা সুলতান উদ্দিন আহমদ।
তাদের আলোচনায় উঠে আসে বহুমুখী প্রতিভার কীর্তিমান আবুল মনসুর আহমদ। দেশ বিভাগের আগেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় যিনি খ্যাতি পান বিপুলভাবে। ব্যঙ্গরচনায় তিনি যে কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন, এ দেশে আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেননি। রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা থেকে প্রায় এক দশককাল সামনের সারিতে থেকে তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথমে প্রাদেশিক এবং পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যঙ্গধর্মী রচনায় যেভাবে তিনি সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামি, রাজনৈতিক ভণ্ডমি ইত্যাদিকে কশাঘাত করেছেন, তা আজও আমাদের মুগ্ধ করে।
তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ছোটগল্প: আয়না, ফুড কনফারেন্স, আসমানী পর্দা; উপন্যাস: সত্য মিথ্যা, আবে হায়াত; প্রবন্ধ-স্মৃতিকথা: আত্মকথা, শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু, বেশী দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা।
সাংবাদিক হিসেবে আবুল মনসুর আহমদ কাজ করেন, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সোলতান, মোহাম্মদী, দি মুসলমান, কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদ। তিনি ১৯২৩ থেকে ১৯২৬ পর্যন্ত সাপ্তাহিক সোলতান ও মোহাম্মদীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি দি মুসলমান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত। আবুল মনসুর ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দৈনিক কৃষক পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসে নবযুগ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে চাকরি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতিতেও আবুল মনসুর আহমদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক জীবন খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও তিনি এ আন্দোলনের বাস্তবতা সম্পর্কে বেশ সন্দিহান ছিলেন।
একটি অভারতীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে সর্বভারতীয় পর্যায়ে আন্দোলন এবং সে আন্দোলনে গান্ধীর অসহযোগের ডাক ও স্বরাজ আদায়ের লক্ষ্য সম্পর্কে আবুল মনসুর আহমদ তেমন একটা খুশি ছিলেন না। তিনি গান্ধীর এ পদক্ষেপকে অবাস্তব মনে করেছেন।
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ আঙিনায় দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিরামহীন চলছে বীক্ষণ পাঠচক্রের এই আসর।