ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দেশের প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে দীর্ঘতম স্টিল আর্চ সেতু। যা ময়মনসিংহবাসীর স্বপ্নের সেতু। নদে থাকবে না সেতুর কোন পিলার। দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ সেতুর নিচ দিয়ে কোনো বাধা ছাড়া চলবে জাহাজ, স্বাভাবিক থাকবে পানিপ্রবাহ। অক্টোবরে দৃশ্যমান হচ্ছে এ সেতুর নির্মাণ কাজ।
সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ময়মনসিংহের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কেওয়াটখালী স্টিল-আর্চ সেতুর নির্মাণ কাজ এ বছরের অক্টোবরে শুরু হতে যাচ্ছে। এক হাজার ১০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগবে। মূল সেতুর ৩২০ মিটার অত্যাধুনিক স্টীল-আর্চ এবং ৭৮০ মিটার এপ্রোচ সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ৫৫১ মিটার সড়ক ওভারপাস ও ২৪০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস এবং ৬.২০ কিলোমিটার ধীরগতির যানবাহন চলাচলের লেনসহ চারলেন মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। সেতুটির কাজ শেষ হলে ময়মনসিংহে যানজট নিরসন ও স্থানীয় অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারের আদলে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ’ নামে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পাটগুদামে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু মোড়ের যানজট নিরসনের জন্য নির্মাণ করা হবে এ স্টিল আর্চ সেতু।
ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পাটগুদাম এলাকায় একমাত্র সড়ক সেতু দিয়ে যাতায়াত করে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মানুষ। মানুষ ও গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে বিভাগীয় শহরটি। ২০১৮ সালে নতুন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের ২ নভেম্বর নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে জনসভার আগে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে স্টিল আর্চ সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সওজ জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রস্তাবিত প্রকল্পটির স্টিল আর্চ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ‘চায়না স্টেইট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং ‘স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারস, বাংলাদেশ’ এ দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কাজ করবে সেতুটির।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় থেকে শুরু হবে মূল সেতুর সংযোগ সড়ক, যা সেতুর অন্য প্রান্ত চায়না মোড় পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। সংযোগ সড়ক মূল সেতুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগেই পড়বে ২৫০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস। এরপরই সংযোগ সড়ক মিলবে ৩২০ মিটার দীর্ঘ মূল স্টিল সেতুর সঙ্গে। সেতুতে ২০২ মিটার র্যাম্পসহ ভারী যান চলাচলের জন্য চারলেন এবং মোটরসাইকেল ও হালকা যান চলাচলের জন্য দুটি লেন থাকবে। মূল সেতু সংলগ্ন একটি টোল প্লাজা ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেমের জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, সেইসাথে ইউটিলিটি ডাক্টও থাকবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শওকত আলী বলেন, কেওয়াটখালী সেতু হবে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ সেতু। সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহের মাঝে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন ঘটবে। ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থিত স্থলবন্দর, ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপন সুগম করবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি উন্মোচিত হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার। এর মাধ্যমে প্রসার ঘটবে এ অঞ্চলের পর্যটন খাত।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যপ্তির ফলশ্রুতিতে প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের জাতীয় অর্থনীতি ও জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।