নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগাতেন রজব আলী (৪৫)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে একটি ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করতে গিয়ে রডের আঘাত ডান পা কেটে যায় তার। ভালো চিকিৎসা না হওয়ায় কাটা স্থানে ক্ষত হয়ে পচন ধরে। একপর্যায়ে পায়ের একটি আঙুল পচে পড়ে যায়।
একসময় যে রজব আলী সংসারের হাল ধরেছিলেন। সময়ের ব্যবধানে তিনি এখন সংসারের বোঝা।
রজব আলীর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের নওয়াগাও গ্রামে। তার স্ত্রী ফজিলা খাতুন গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে আশরাফুল আলম অষ্টম শ্রেণি ও মাহিন মিয়া প্রথম শ্রেণিতে পড়েন। ছোট মেয়ে মাহমুদার বয়স চার বছর।
পায়ে পচন ধরার পর থেকে রজব আলীর জীবন বিষাদে ভরে গেছে। হারিয়েছেন কাজ করার ক্ষমতা। অভাবের তাড়নায় হচ্ছে না ভালো চিকিৎসা। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে তার শুয়ে বসে। মাঝেমধ্যে লাঠিতে ভর দিয়ে বাড়ির আঙিনায় হাঁটাহাঁটি করেন।
রজব আলীর উপার্জন বন্ধ হওয়ার পর তার স্ত্রী সংসারের হাল ধরতে ভাড়া মেশিনে ত্রিপল সেলাই শুরু করেন। কিন্তু আয়ের সামান্য টাকায় যেখানে পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেয়াই কষ্টকর। সেখানে স্ত্রী পক্ষে স্বামীর উন্নত চিকিৎসা করানো প্রায় অসম্ভব।
রজব আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাবা যখন কাজ করতো তখন তিনবেলা খেতে পারতাম। এখন একবেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। মা খাতা-কলম কিনে দিতে পারে না পড়াশোনাও বন্ধের উপক্রম।
রজব আলীর স্ত্রী ফজিলা খাতুন বলেন, ত্রিপল সেলাইয়ের আয়ে সন্তানদের মুখে তিনবেলা ভাত দিতে পারিনা। পায়ের ক্ষতের ব্যাথার যন্ত্রণায় স্বামী ঘুমাতে পারে না। টাকার জন্য চিকিৎসা হচ্ছে না। সন্তানদের পড়াশোনাও বন্ধের পথে। এখন আমাদের পাশে কেউ না দাঁড়ালো আমরা কোথায় যাবো ?।
রজব আলী বলেন, সুস্থ থাকতে একার আয়েই সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগিয়েছি। আর এখন পায়ে পচন ধরায় উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে নিজেই সংসারের বোঝা হয়ে গেছি। সরকার ও হৃদয়বানদের কাছে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমি সহযোগিতা চাই।
রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, অভাবের তাড়নায় রজবের পরিবারে চলছে চাপা আর্তনাদ।প্রতি মাসে ঢাকায় গিয়ে রজবের পায়ে ইনজেকশন দিতে হয়। আমরা গ্রাম থেকে ওই টাকাটা তুলে দেই। তবে পায়ে যেভাবে পচন ধরেছে, এজন্য তার ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু অভাবী পরিবারের তো সেই সামর্থ্য নেই।