সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বহ্মপুত্রের পাড়ে বসে ছবি আঁকতেন। তার স্মরণে ময়মনসিংহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। এ সংগ্রহশালাকে কালচারাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেটা প্রক্রিয়াধীন। চারুকলা, নিত্য, সঙ্গীত, ট্রেনিং সেন্টার, অডিটোরিয়াম, আবাসনসহ একটি শিল্পসাহিত্য সংস্কৃতির জন্য যা প্রয়োজন সকল অনুষঙ্গ থাকবে এ কালচারাল হাবে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে আয়োজিত বিভাগীয় সাংস্কৃতিক উৎসবের (আঞ্চলিক সংগীত) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের আজীবন কিংবদন্তি যতীন সরকার এ অঞ্চলের সন্তান। দীনেশচন্দ্র সেনের মৈমনসিংহ গীতিকার অঞ্চল এটি। মলুয়া, মহুয়াসহ এখানে বাউল, জারি, সারি, পালা গান সব কিছুরই ভীষণ প্রচলন ছিল। এটির কেন্দ্র ছিল কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল, যেখানে সুনামগঞ্জের কিছুটা সম্পৃক্ততা ছিল। শেরপুর ও জামালপুরেও ছিল অনেকটা। সাথে সাথে ময়মনসিংহ জেলাও এতে সমৃদ্ধ হয়। জালাল উদ্দীন খা, সত্যজিৎ রায়, ছকিনা বিবি’র মতো অনেক গুণীজন এ অঞ্চলের সংস্কৃতির ইতিহাস। সবকিছু মিলিয়ে ময়মনসিংহ সংস্কৃতির একটি অসাধারণ জায়গা।
‘আঞ্চলিক সংগীতে প্রাণের স্পন্দন’ এ প্রতিপাদকে ঘোষণা দিয়ে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করার জন্য এবং সেইসাথে সাংস্কৃতিক জাগরণ বৃদ্ধি করতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংস্কৃতিক উৎসরের আয়োজন করা হয়। ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলা জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ থেকে আগত সংস্কৃতিমনা শিল্পীরা এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলী, স্থানীয় সরকার পরিচালক ফরিদ আহমদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাজীব কুমার সরকার, শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ, জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল।
বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, কবিতা নিয়ে আলাপ করতে চাই, পছন্দের গান শুনতে চাই, বাস্তব জগৎ থেকে কিছুটা সময় অন্য ভুবনে থাকতে চাই সেই সময় নেই। আমরা এতো ব্যস্ত, সবাই টাকার পেছনে ছুটছি। আমার প্রাণ যেটা চায় তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এ অবস্থায় এ ধরণের আয়োজনের বিকল্প নেই।
উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে বিভাগীয় চার জেলার (নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ) পক্ষ থেকে নিজ নিজ জেলার সাংস্কৃতিক দল তাদের ঐতিহ্যবাহী সংগীত, কবিতা, নাচ পরিবেশন করে। এসময় নানা বাদ্যযন্ত্র আর বাঁশির সূরের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের আছড়ে পড়া ঢেউ যেনো অন্যমাত্রা যোগ করে। আঞ্চলিক গানে কণ্ঠ সুধা আর নৃত্যে পুরো বিকেল-সন্ধ্যা মাতিয়ে তোলেন শিল্পীরা। প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক সংগীতের এ উৎসব দর্শকরাও মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন। গ্রামীণ আবহে সাজানো মঞ্চে এ পুরো আয়োজন হয়ে উঠে আরও বেশি নান্দনিক।
প্রথমেই ‘আমায় এত দুঃখ দিলি বন্ধুরে বন্ধু/আমি তোর পিরিতের দেওয়ানারে দেওয়ানা/মন জানে আর কেউ জানে না’ গানে শিল্পি দিল বাহার খান মাতিয়ে তোলেন। শিশু শিল্পি আইরিন জাহানে কণ্ঠে ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ/শোন বলি রে পাগল মন। এবং গোলাম মাওলার পরিবেশনায় ‘সোয়া চান পাখি’ ঢেউ তোলে দর্শকদের হৃদয় মননে।
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির শিল্পিদের জুম নৃত্যে উঠে আসে আদিবাসিদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির আদিঅন্ত। বাঁশি আর আদিবাসি বাদ্যযন্ত্রের তালে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য অপলক দৃষ্টিতে দেখেন দর্শকরা। সবশেষে চার জেলা সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনের ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আগত দর্শকরা বলেন, সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন হলেও আঞ্চলিক সংগীতকে সামনে এনে এ ধরণের আয়োজন প্রথম। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে। এ ধরণের আয়োজন নিয়মিত হলে নতুন প্রজন্ম তার অতীত সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।