তিন দিনের কর্মবিরতি পালন শেষে নতুন কর্মসূচি দেয়া থেকে সরে এসেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। জেলা পুলিশ সুপারের দেয়া বিচারের আশ্বাসের পর ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে আগামীকাল রোববার থেকে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দেয়া এক বিবৃতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ জানায়, দোষী সকল পুলিশ সদস্যকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। ইতোমধ্যে তিনজন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। রোগীদের কথা চিন্তা করে কাজে যোগ দিলেও ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ স্থায়ী বরখাস্ত না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে, সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর পৌনে ১ টা থেকে কলেজের একাডেমিক ভবনের মূল ফটক তালাবদ্ধ করে সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে শুরু করে। পরে বেলা সোয়া ২ টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম সেখানে গিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনা করলে সেগুলো দ্রুত পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন স্থগিত করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো হচ্ছে- ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশি হামলায় জড়িত সকল পুলিশ সদস্যদের স্থায়ী চাকুরিচ্যুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান; হাসপাতালে সকল চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; বয়েজ হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও বহিরাগতদের সকল ধরণের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধকরণ; ক্যাম্পাসে প্রাঙ্গণ ও লেডিস হোস্টেলে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; অনতিবিলম্বে চিকিৎসক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও কার্যকর; বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও ক্যান্টিনে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধকরণ; হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধকরণ ও সকল ধরনের সেরা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার প্রদান।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আব্দুল কাদের বলেন, তাদের দাবিগুলো অবশ্যই যৌক্তিক। ইতিমধ্যে দাবি পূরণে কাজ চলমান রয়েছে।
এর আগে, গত বুধবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনসার সদস্যের সাথে রোগীর স্বজনের বাকবিতন্ডাকে কেন্দ্র করে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে গালিগালাজ করার অভিযোগ ও হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ৮ ইন্টার্ন চিকিৎসক আহত হয়। এ ঘটনায় ক্যাম্পের ইনচার্জ ও এক পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে কর্মবিরতির ধর্মঘটের ডাক দেয় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনের চিকিৎসার জন্য শেরপুর থেকে মমেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে যান মাহমুদুল হাসান নামে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক। এ সময় তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে স্ত্রীকে আগে দেখানোর চেষ্টা করেন। অন্য রোগী থাকায় আগে দেখানো যাবে না বলে তাকে জানান দায়িত্বরত আনসার সদস্য মোবারক হোসেন। একপর্যায়ে তিনি মাহমুদুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এতে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। এ সময় হট্টগোল দেখে সেখানে কর্তব্যরত নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের সরিয়ে দিতে বলেন আনসার সদস্যকে। এ সময় মাহমুদুলের ছেলে মাহাদি ওই চিকিৎসককে গালি দেন। এতে আনসার সদস্য ক্ষিপ্ত হলে একপর্যায়ে মাহমুদুল হাসান জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পরে মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ গিয়ে রোগীসহ স্বজনদের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণ জানতে চান ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মাহিদুল হক অয়ন। এতে আবারও শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। একপর্যায়ে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসককে গালি দেওয়া রোগীর ছেলে মাহাদিকে আঘাত করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে আঘাত পান ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. অয়ন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পুলিশ মেরেছে- এমন খবর পেয়ে সকল ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারামারিতে অন্তত আটজন আহত হন।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় পুলিশের মেডিকেল ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম ও কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম এবং অভিযুক্ত এএসআই মাহমুদুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটির রোববার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।