আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নোবেল কমিটি দেয় না, এটা দেয় আমেরিকা থেকে। ইউনূস আমেরিকার সুপারিশে টাকা দিয়ে এই পুরস্কার পেয়েছেন। আর এই পদক পাওয়ার পরে তিনি কি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন?
হানিফ আরও বলেন, খোদ আমেরিকাতেও অনেক ব্যক্তিকে নোবেল পাওয়ার পরও আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বেনারসের এক নোবেলজয়ীরও ১০ বছরের জেল হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নোবেলজয়ীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড হলে তাদেরও বিচার হয়েছে। তখন তো এভাবে কেউ বিবৃতি দেয়নি। এখন কেন দিচ্ছে? যারা জ্ঞান ও গবেষণায় নোবেল পেয়েছেন তাদের যদি কৃতকর্মের জন্য বিচার হয়ে থাকে, তাহলে ড. ইউনূস টাকা দিয়ে নোবেল পাওয়ার পর কী এমন হয়ে গেলেন, তার বিচার করা যাবে না। এই বিধান কে দিয়েছে?
আজ (শনিবার) প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা ড. ইউনূসের পক্ষে সাফাই গেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছেন, তাদের জাতি ভালো করে চেনে। এরাই একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াতসহ এ দেশের বিরোধিতাকারী পশ্চিমা শক্তি। এরাই শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে এ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, শেখ হাসিনা সরকার এই দেশের জনগণের সরকার। এখনও দেশের ৭০ ভাগ জনসমর্থন শেখ হাসিনার পক্ষে। যতদিন এই দেশের মানুষের আস্থা, ভরসা ও সমর্থনে শেখ হাসিনা থাকবেন, ততদিন কেউ এই সরকারকে সরাতে পারবে না। আর কোনো ষড়যন্ত্র করে কারও বিচার বন্ধ করা যাবে না। যে অপরাধ করেছে, তার বিচার অবশ্যই হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কাজেই ড. ইউনূসের পক্ষে সাফাই গেয়ে কোনো লাভ নেই।
দেশের জন্য ড. ইউনূসের কোনো অবদান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশের সবচেয়ে সুদখোর ব্যবসায়ী ড. ইউনূস। এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, তার অবদান কী? উনি কোনো সংকটে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন না। উনি এই দেশের স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনারসহ কোনো জাতীয় অনুষ্ঠানেও যান না। উনি মনেপ্রাণে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা। উনার বাবাও সুদখোর ছিলেন। আর সুদখোরের ছেলে সুদখোর হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজকে তাকে ইস্যু করে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে পত্রিকা খুললে দেখতে পাচ্ছি, দেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়ে বলছেন, সারা বিশ্বে ড. ইউনূসের এতো জনপ্রিয়তা কিন্তু দেশে তাকে সম্মানহানি করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, যারা ইউনূসের পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন, তারা কি বোঝেন না, কেন এই দেশের মানুষ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে? উনি শান্তিতে পুরস্কার পেলেন। উনি কি শান্তি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন? উনি মাইক্রোক্রেডিটে সুদের ব্যাবসা করেছেন। সেখান থেকে কোন শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন? বরং গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অন্তত ১০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি হারিয়ে ঢাকা শহরে এসে রিকশা চালায়। ড. ইউনূস ঋণ দেয়ার নাম করে গ্রামের মানুষকে শোষণ করেছে। কিস্তি দিতে গিয়ে মানুষ অসহায় হয়ে গেছে। কিস্তি না দিতে পারলে মানুষের ঘরের খাট, চাল, গরু নিয়ে গেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে না পেরে লজ্জায়, দুঃখে, কষ্টে ৩৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল।
দেশের টাকা লুট করে ড. ইউনূস বাইরে পাচার করেছেন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, আমেরিকাতে গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে মাইক্রোক্রেডিট চালু করেছেন। প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছেন। আমেরিকার সরকার বলেছে উনি ইনভেস্ট করে মানুষকে সহায়তা করছেন। কার টাকা তিনি নিয়ে গেলেন? উনি তো গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে চাকরি করেন। উনি বেতন পান কত টাকা? উনি ২২ হাজার কোটি টাকা কোথায় পেলেন? এই টাকার উৎস কী? বাংলাদেশ থেকে টাকা কোন পথে নিয়ে গেলেন।
তিনি বলেন, ২ বিলিয়ন ডলার বৈধ পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই তাহলে নিশ্চয়ই অবৈধ পথে মানি লন্ডারিং করে টাকা নিয়ে গেছেন। আমি মনে করি, এসব কিছুর তদন্ত করে মানি লন্ডারিং-এর দায়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা উচিত। যে টাকা পাচার হয়েছে সে টাকা ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত। আমাদের দেশের টাকা নিয়ে আপনাদের ওখানে নিয়ে চ্যারিটি করবে আর আপনারা তার পক্ষে সাফাই গাইবেন। গাইতেই পারেন। আপনাদেরকে টাকা দিচ্ছে। আপনারা তার পক্ষ কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান মেহেদীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।