রাতভর তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে। আগে রোগী দেখানোকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। যেটি পরে পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে গড়ায় পুলিশ ও ইন্টার্নি চিকিৎসকদের সংঘর্ষে। এতে দুই পুলিশসহ ৮ ইন্টার্নি চিকিৎসক আহত হন। এর মধ্যে দু’জনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউতে) নেওয়া হয়েছে।
এমন ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করছে ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদ। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে পুলিশ ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়াসহ ক্যাম্পের ইনচার্জ ও এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জেলা পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বুধবার রাত ১০ টার দিকে স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনের চিকিৎসার জন্য শেরপুর থেকে মমেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে যান মাহমুদুল হাসান নামে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক। এসময় তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে স্ত্রীকে আগে দেখানোর চেষ্টা করেন মাহমুদুল। অন্য রোগী থাকায় আগে দেখানো যাবে না বলে তাকে জানায় দায়িত্বরত আনসার সদস্য মোবারক হোসেন। এক পর্যায়ে সে মাহমুদুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এতে শুরু হয় বাকবিতন্ডা। এসময় হট্টগোল দেখে সেখানে কর্তব্যরত নারী ইণ্টার্নি চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের সরিয়ে দিতে বলেন আনসার সদস্যকে। এসময় মাহমুদুলের ছেলে মাহাদি ওই চিকিৎসককে গালি দেয়। এতে আনসার সদস্য ক্ষিপ্ত হলে এক পর্যায়ে মাহমুদুল হাসান জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পরে মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ গিয়ে রোগীসহ স্বজনদের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় ইন্টার্নি চিকিৎসককে নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে ইন্টার্নি চিকিৎসকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণ জানতে চান ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মাহিদুল হক অয়ন। এতে আবারও শুরু হয় বাগবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসককে গালি দেয়া রোগীর ছেলে মাহাদিকে আঘাত করে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। এসময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে আঘাত পায় ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. অয়ন। ইন্টার্নি চিকিৎসকদের পুলিশ মেরেছে এমন খবর পেয়ে সকল ইন্টার্নি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে ইন্টার্নি চিকিৎসকের মারামারিতে অন্তত ৮ জন আহত হন। এর মধ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি ডা. শামীম রেজা ও ডা. সাদিককে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার রাতভর হাসপাতালে বৈঠক হয়। সেখানে সিটি মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু ও জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঁঞাসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর পুলিশের মেডিকেল ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম ও কনস্টেবল আরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পের সকল পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ ক্যাম্পটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ। ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজন পুলিশের এএসআই মাহমুদুল হাসান ও আনসার সদস্য মোবারক হোসেনকে ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। তবে ১৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা একাধিক রোগী জানিয়েছেন, বুধবার রাতে রোগী নিয়ে সিরিয়াল ভেঙে আগে দেখাতে চাইলে আনসার সদস্য ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত হয়।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোঃ গোলাম ফেরদৌস বলেন, এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন কমিটি গঠন হয়েছে। পুলিশও ব্যবস্থা নিয়েছে। মামলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গেলেও হাসপাতালের চিকিৎসকদের দিয়ে যথাযথ চিকিৎসা সেবা চালু রাখা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা বলেন, তাৎক্ষণিক দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বুধবার থেকেই তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করছে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মাহিদুল হক অয়ন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. প্রতীক বিশ্বাস স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য জানানো হয়। বিকেলে ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. প্রতীক বিশ্বাস বলেন, চিকিৎসকদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার দাবিতে বিচার চাইছি। পুলিশ তাৎক্ষণিক দু’জনকে সাময়িক বহিস্কার করলেও এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার।
হাসপাতালের ভেতর এমন নিন্দা জানিয়ে ও দোষীদের বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ জেলা শাখা। আগামী শনিবারের মধ্যে দোষিদের ব্যবস্থা না নিলে রোববার থেকে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয় ওই বিবৃতিতে।