বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে (৩০ জুন পর্যন্ত) প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ/রেন্টাল পেমেন্ট) পেয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। ৮২টি আইপিপি (স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী) এবং ৩২টি রেন্টাল (ভাড়ায় চালিত) বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানান।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। মোকাব্বির খান জানতে চান, বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে কোন কোন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে কী পরিমাণ কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) পরিশোধ করা হয়েছে? ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান? তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তির শর্তাবলি কী কী?
জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কেন্দ্র ভাড়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিমন্ত্রীর তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) টাকা বেশি পেয়েছে। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড সাত হাজার ৪৫৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, মেঘনা পাওয়ার লিমিটেড পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি ১২ লাখ টাকা, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড চার হাজার চার কোটি আট লাখ টাকা, সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড তিন হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, সেমক্রপ এনডব্লিউপিসি লিমিটেড ২ হাজার ৮২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, এপিআর এনার্জি দুই হাজার ৭৮৮ কোটি চার লাখ টাকা, সামিট বিবিয়ানা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড দুই হাজার ৬৮৩ কোটি তিন লাখ টাকা, হরিপুর পাওয়ার লিমিটেড দুই হাজার ৫৫৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লিমিটেড দুই হাজার ৩৭৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার ইউনিট-১ লিমিটেড এক হাজার ৮৫৩ কোটি ২২ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বিগত তিন মেয়াদে ৩২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে (রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) ভাড়া বাবদ দেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার ৬৮৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেশি টাকা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৫টি ইউনিট) ছয় হাজার ৪১১ কোটি ২২ লাখ টাকা, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস দুই হাজার ৩৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা, কেপিসিএল (ইউনিট-২) এক হাজার ৯২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেড এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৮৫ মেগাওয়াট) এক হাজার ৫৫৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড এক হাজার ৫৩০ কোটি ৯ লাখ টাকা, অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস লিমিটেড এক হাজার ৪৮৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৯৫ মেগাওয়াট) এক হাজার ৪৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দেশ অ্যানার্জি সিদ্ধিরগঞ্জ এক হাজার ৩৯১ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ম্যাক্স পাওয়ার এক হাজার ৩০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে সেসব কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির কিছু শর্তের কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শর্তের মধ্যে রয়েছে বার্ষিক অ্যাভেইলেবিলিটি (প্রাপ্যতা) ৯০ শতাংশ থাকতে হবে। এর কম হলে কেন্দ্র ভাড়া কাটা হয়। বার্ষিক ‘ডিপেন্ডেবল ক্যাপাসিটি টেস্ট’ (নির্ভরযোগ্যতার সক্ষমতা পরীক্ষা) সম্পাদন করতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার সময় ঝুঁকির নিরাপত্তায় বিমা করতে হবে। উৎপাদনে থাকুক বা না থাকুক, চুক্তি অনুসারে কেন্দ্র ভাড়া পায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, যাকে ক্যাপাসিটি চার্জ বলা হয়।
লোকসানে আরইবি, ডেসকো ও ডিপিডিসি : হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) লোকসান হয়েছে দুই হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) লোকসান হয়েছে ২২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। একই অর্থ বছরের ৯ মাসে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) লোকসান হয়েছে ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতিবেশী ভারত থেকে ছয়টি চুক্তির মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।