ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যুবলীগকর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ হত্যাকান্ডকে ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান।
তিনি জানান, সোমবার এলাকায় ঝাড়ু মিছিল হওয়ার কথা ছিলো। রাজনৈতিক দুটি গ্রুপ থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে থানার ওসি লিখিত আবেদন করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এদিন সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো হলেও তা করতে পারেনি।
এর আগে রোববার মধ্য রাতে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যটাস দেন। তাতে বলা হয়- ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের অন্তর্গত মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, শ্রমিক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তাগাছা পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান-সহ মুক্তাগাছার সকল পর্যায়ের আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সকল পর্যায়ের সভা, সমাবেশ, মিছিল স্থগিত রাখার নির্দেশসংবলিত অনুরোধ করা গেল।
কিন্তু যুবলীগকর্মী আসাদ হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবিতে সোমবার পূর্ব ঘোষিত ছাড়ু মিছিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে মুক্তাগাছা পৌর শহরের আটানী বাজারে। কিন্তু প্রশাসন সেখানে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
মুক্তাগাছা থানার ওসি আবদুল মজিদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। তারপরেও লোকজন জড়ো হয়। পরে কর্মসূচি পালনে পুলিশ নিষেধ করে। এরপর তারা নিরাপদে চলে যেতে চাইলে সেই ব্যবস্থা করা হয়। এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মেতায়েন রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, মুক্তাগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দ। তার সঙ্গে দলের তৃণমূল পর্যায়ের বড় একটি অংশ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তার সঙ্গে রয়েছেন পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকার এবং বিল্লালের জামাতা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনি।
দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব বহু আগে থেকেই চলে আসছে। গত পাঁচ মাসে বিভিন্ন যানবাহন স্ট্যান্ডের টাকা তোলা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারিসহ নানা ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে।
গত ২৮ আগস্ট রাতে যুবলীগ কর্মী আসাদকে হাত-পা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে তাইব হাসান আনন্দ বাদী হয়ে মাহাবুবুল আলম মনিসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এদিকে মনিসহ হত্যায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে এলাকায় আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে আসাদ হত্যাকান্ড রাজনৈতিক দ্বদ্বে হয়নি বরং পারিবারিক দ্বন্দ্বে আসাদ খুন হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মো. বিল্লাল হোসেন সরকার। এ ঘটনায় জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আসামি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রোববার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করেন বিল্লাল হোসেন সরকার।