ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন। দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। দীর্ঘ তিন দশক পর এটি হবে ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম ঢাকা সফর। ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তখনকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশে এসেছিলেন।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা ও প্যারিসের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র প্রথম আলোকে মাখোঁর বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সফরের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশে আসছেন। ঢাকায় অবস্থানের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের নভেম্বর প্যারিসে দ্বিপক্ষীয় সফরে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি এমানুয়েল মাখোঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের সময় দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের জন্য ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্মতিপত্রে সই করে।
দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার যে সম্মতিপত্র সই করেছে, তাতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো যুক্ত রয়েছে।
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। প্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী এক পক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অন্য পক্ষ তা সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। দুই দেশ তাদের এই সম্পর্কের একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে সহযোগিতার সব বিষয়ে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক আলোচনা আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছে। দুই পক্ষ রাজনীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়সহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতায় জোর দিয়েছে।
জানা গেছে, এমানুয়েল মাখোঁ ঢাকা সফরটি মূলত ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর প্যারিস সফরের ফলোআপ। ওই সময় নেওয়া দুই শীর্ষ নেতার সিদ্ধান্তের আলোকে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ঢাকায় আলোচনা হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের ব্যাপ্তি সময়ের দিক থেকে খুব বেশি নয়। তিনি ১১ সেপ্টেম্বর এসে ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়বেন। কিন্তু তাঁর ঢাকা সফরের ঠিক সপ্তাহখানেক আগেই বাংলাদেশ ঘুরে যাবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের বাংলাদেশ সফর কৌতূহলোদ্দীপক বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।